মহারাষ্ট্রে লাফিয়ে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৯-১২ ০৮:৩৯:৫১


সরবরাহ সংকটের কারণে ভারতের বাজার গুলোতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম।কোনোভাবেই এর লাগাম টানা সম্ভব হচ্ছে না।এ ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ভারতের পাইকারি বাজারে প্রতি কুইন্টাল রফতানিযোগ্য পেঁয়াজের দাম বেড়ে ২ হাজার ৫০০ রুপি ছাড়িয়ে গেছে। মাত্র এক মাসের ব্যবধোনে পেঁয়াজের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে শুধু ভারতীয় ক্রেতা-বিক্রেতারা বড় ধরনের সংকটের মধ্যে পড়বেন তা নয়, বরং বাংলাদেশসহ ভারতের আশপাশের দেশগুলোর বাজারেও ভারত থেকে পেঁয়াজ রফতানিতে চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে। ফলে এসব দেশেও বাড়তে পারে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম। খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।

এশিয়ার সবচেয়ে বড় পেঁয়াজের বাজার মহারাষ্ট্রের নাসিক জেলার লাসালগাঁওয়ে মান্দিতে অবস্থিত। বাংলাদেশে আমদানি করা পেঁয়াজের সিংহভাগ জোগান দেন নাসিকের রফতানিকারকরা। গত আগস্ট থেকে নাসিকের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করেছে। সেপ্টেম্বরে এসে এ মূল্যবৃদ্ধি যেন লাগাম ছাড়িয়েছে। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না পেঁয়াজের বাড়তি দাম। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, গত এক মাসে নাসিকের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।

নাসিকের পাইকারি বাজারে চলতি বছরের মার্চে প্রতি কুইন্টাল রফতানিযোগ্য পেঁয়াজের গড় দাম ছিল ১ হাজার ৪৯৮ রুপি (ভারতীয় মুদ্রা)। এর পর পরই মহারাষ্ট্রের কৃষকরা নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ বাজারে ছাড়তে শুরু করেন। এর জের ধরে কমতে শুরু করে পণ্যটির দাম। এ ধারাবাহিকতায় জুলাই নাগাদ নাসিকের বাজারে প্রতি কুইন্টাল রফতানিযোগ্য পেঁয়াজের দাম কমে ৭৩০ রুপিতে নেমে আসে।

তবে এ বছরের আগস্ট থেকে বাড়তির দিকে রয়েছে পেঁয়াজের দাম। নাসিকের পাইকারি বাজারে আগস্টের শুরুতে রফতানিযোগ্য পেঁয়াজের দাম কুইন্টালে ১০০ রুপি বেড়ে যায়। মাসের শেষ দিকে এখানকার পাইকারি বাজারে প্রতি কুইন্টাল রফতানিযোগ্য পেঁয়াজের দাম আরো বেড়ে ১ হাজার ২০০ রুপিতে উন্নীত হয়।

চলতি সেপ্টেম্বরেও রফতানিযোগ্য পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম টানা সম্ভব হয়নি। ৩ সেপ্টেম্বর নাসিকে প্রতি কুইন্টাল পেঁয়াজের দাম ২ হাজার রুপি ছাড়িয়ে যায়। সর্বশেষ কার্যদিবসে নাসিকের পাইকারি বাজারে প্রতি কুইন্টাল রফতানিযোগ্য পেঁয়াজ ২ হাজার ৫০০ রুপির বেশিতে বিক্রি হয়েছে। সেই হিসাবে, জুলাইয়ের তুলনায় চলতি মাসে নাসিকে পেঁয়াজের দাম প্রায় তিন গুণের বেশি বেড়েছে। আর এক মাসে পণ্যটির দাম বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি।

এর পেছনে প্রতিকূল আবহাওয়ায় সরবরাহ বিঘ্ন ঘটাকে চিহ্নিত করেছেন নাসিকের দিনদোরি পাইকারি বাজারের অপারেটর ও অনিয়ন কমিশনের এজেন্ট সুরেশ দেশমুখ। তিনি বলেন, আগস্টজুড়ে মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাটে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এ সময় উৎপাদিত পেঁয়াজের সিংহভাগ পচে গেছে। বৃষ্টির কারণে আগস্ট থেকে বাজারে আসা পেঁয়াজের মানও বেশ নিম্ন। মূলত এ সময় থেকে বাজারে আসা নিম্নমানের পেঁয়াজের পরিমাণ প্রায় ৮০-৮৫ শতাংশ। প্রতিকূল আবহাওয়ায় সরবরাহ শৃঙ্খল বিঘ্নিত হলেও অভ্যন্তরীণ ও রফতানি বাজারে পেঁয়াজের চাহিদা কমেনি। যা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

একই কথা বলেছেন নাসিকের পাইকারি ব্যবসায়ীরাও। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, পচনশীল পণ্য হওয়ায় বর্ষায় প্রতি বছরই পেঁয়াজের দাম কিছুটা চাঙ্গা হয়ে ওঠে। বৃষ্টিতে অনেক পেঁয়াজ ক্ষেতে নষ্ট হয়। পরিবহনের সময় বৃষ্টির পানিতে অনেক পেঁয়াজ পচে যায়। বর্ষাকালে সরবরাহ সংকট থেকে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি একটি স্বাভাবিক ঘটনা। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। এবারের বর্ষায় নাসিকের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে। কোনোভাবেই পণ্যটির মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

তবে অক্টোবর-নভেম্বর নাগাদ খরিফ মৌসুমের নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করবে। ওই সময় নাসিকের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বর্তমানের তুলনায় কমে আসার সম্ভাবনা দেখছেন এখানকার ব্যবসায়ী ও রফতানিকারকরা।