‘শিক্ষা নীতিতে ‘ই-লার্নিং’ কার্যক্রমকে গুরুত্বারোপ করা হবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২০-০৯-১২ ১৭:০৮:০৬


শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, কোভিড মাহমারী একটি বৈশ্বিক সংকট, যেটি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ও একধরনের সংকটে ফেলেছে। প্রতিটি সংকটই সম্ভাবনার নতুন দিক উন্মোচন করে। কোভিড নাইনটিন মহামারী শিক্ষা ব্যবস্থায় ‘ই-লার্নিং’ কার্যক্রম ব্যবাহর বাড়ানোর জন্য নতুন একটি দিগন্ত উন্মোচিত করেছে।

তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের বর্তমান সময়ে ‘ই-লার্নিং’ অত্যন্ত কার্যকর এবং সামনের দিনগুলোতে এটি আরো ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হবে।

মন্ত্রী বলেন, আমাদের বর্তমান শিক্ষানীতি ২০১০ সালে প্রণয়ন করা হয়েছে, সেটাকে যুগোপোযোগীকরণ এবং সংষ্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিক্ষানীতিতে ই লার্নিং কে আরো বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে।

তিনি জানান, এদেশের মানুষ অত্যন্ত প্রযুক্তি বান্ধব, যার কারণে বিশেষকরে শিক্ষাকার্যক্রমে ই-লার্নিং-এর ব্যবহার বৃদ্ধিতে আমাদের জন্য খুব বেশি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে না। তিনি বলেন, সামনের দিনগুলোতে ক্লাশরুমে সরাসরি শিক্ষাদান কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি অনলাইনের মাধ্যমে ‘ই-লার্নিং’ কার্যক্রম চালু রাখতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের নতুন নতুন বিষয়ে দক্ষতা উন্নয়নে ‘ই-লার্নিং’ কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ ভমিকা রাখবে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ নানান প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে এ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে এবং কোভিড মহামারী মোকাবেলায় এদেশের মানুষ সাহসিকতার পরিচয় দিবে।

তিনি জানান, সামনের দিনগুলোতে কি ধরনের দক্ষ লোকবল প্রয়োজন হবে, তার একটি প্রাক নির্বাচনের মাধ্যমে সে অনুযায়ী আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম, অবকাঠামো এবং শিক্ষকবৃন্দের দক্ষতা উন্নয়ন করতে হবে। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা আরো সম্প্রসারণে মানসিকতা একটি বড় বাধা বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, মেধাবীদের শিক্ষাক্রমে নিয়ে আসার জন্য এ পেশাটিকে আরো আকর্ষনীয় করে তোলতে হবে এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আরো দক্ষ করে তোলতে হবে। শিক্ষামন্ত্রী বিশেষকরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আরো বেশি হারে গবেষণা পরিচালনার উপর জোরারোপ করেন। তিনি জানান, বর্তমানে দেশের ১৭% শিক্ষার্থী কারিগরি শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় রয়েছে। তিনি পরীক্ষা এবং সনদ সর্বস্ব শিক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত মানুষ গড়ে তোলা সম্ভব নয় বলে, মত প্রকাশ করেন এবং শিল্পখাত ও শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে সমন্বয় আরো বাড়ানো প্রয়োজন বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘ই-লার্নিং’ শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আজ এ কথা বলেন।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-উর রশিদ, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি বাংলাদেশ-এর উপাচার্য প্রফেসর ড. কারম্যান জেড লামাংনা, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড-এর চেয়ারম্যান ড. মোঃ মুরাদ হোসেন মোল্লা, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি’র ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. খাজা ইফতেখার উদ্দিন আহমদ, নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং অ্যান্ড ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইশতিয়াক আজিম প্রমুখ উক্ত ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে যোগদান করেন।

স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, ইউনেস্কো’র হিসাব অনুযায়ী কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সারা বিশ্বে ১.৩৭ বিলিয়ন শিক্ষার্থীর স্বাভাবিক শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, সামাজিক দূরত্ব রক্ষার জন্য প্রথাগত শিক্ষাদান কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যাহত হওয়ায় নিউ নরমাল পরিস্থিতিতে ই-লার্নিং নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে এবং ই-লার্নিং কে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য জাতীয় শিক্ষা নীতিতে ‘ই-লানিং পলিসি’ অন্তর্ভূক্তকরণ, সারাদেশে নির্ভরযোগ্য হাই স্পিড ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন, ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর ভ্যাট ও ট্যাক্স হ্রাসকরণ, ই-লার্নিং-এর বিকাশে এর সঙ্গে যুক্ত স্টার্টআপগুলোকে বিশেষ প্রণোদনা দেয়া এবং ব্যাংক অর্থায়নের সুযোগ সৃষ্টি করা অত্যন্ত জরুরী। তিনি উল্লেখ করেন, অবকাঠামো ও ইন্টারনেট সংযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পিছিয়ে রয়েছে। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, শিল্পখাতের চাহিদা অনুযায়ী তরুণ জনগোষ্ঠীকে প্রস্তুত করতে কারিগরি শিক্ষায় আরো বেশি হারে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তিনি জানান, অর্গানাইজেশন ফর ইকোনোমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ঙঊঈউ)-এর ভুক্ত দেশগুলোতে কারিগরি শিক্ষায় গড় অংশগ্রহণের হার ৪৫ শতাংশের উপরে, সেখানে বাংলাদেশে ১৫ শতাংশেরও কম। এমতাবস্থায় কারিগরি শিক্ষায় অংশগ্রহণ এবং আগ্রহ বৃদ্ধি করতে একে সহজলভ্য করা প্রয়োজন বলে, মনে করেন ডিসিসিআই সভাপতি এবং এ ক্ষেত্রে ই-লার্নিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্তরাজ্যের ‘ইউনির্ভাসিটি অব সারে’-এর উপ-উপাচার্য প্রফেসর ওসামা খান।

মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, ই-লার্নিং এর ক্ষেত্রে সেবা প্রদানের জন্য ইন্টারনেটের পাশাপাশি রেডিও, টেলিভিশন, মোবাইল ও পোষ্টাল সার্ভিস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, যেখানে এক্ষেত্রে পাঠ্যসূচির গুণগত মান নিশ্চিত করা এবং এ ধরনের শিক্ষাকার্যক্রমে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর কার্যকর মিথস্ক্রিয়া অতীব জরুরী। তিনি বলেন, এজন্য ভার্চুয়াল লার্নিং ইনভায়রনমেন্ট খুবই জরুরী। তিনি আরো বলেন, কি শিখানো হবে এবং কিভাবে শিখানো হবে সেটা যথাযথভবে নির্ধারন করা গেলে তা যথার্য হবে।

নির্ধারিত আলোচনায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-উর রশিদ বলেন, আমাদের শিক্ষা কার্যক্রমে ই-লার্নিং পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে এবং কোভিড মাহামারী আমাদের জন্য একটি সুযোগ এনে দিয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমান অবস্থা মোকাবেলায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০০০০ শিক্ষকের মধ্যে নির্বাচিত ১৫০০ জন শিক্ষকের মাধ্যমে অনলাইনে ১৭ হাজার ৫০০টি লেকচার প্রদান করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং অ্যান্ড ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইশতিয়াক আজিম বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচেছ এবং আমাদের এ পরিবর্তনকে উপেক্ষা না করে বরং তার সাথে মানিয়ে নেওয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে।