বিএসইসির লক্ষ্য প্রতিদিন ৫ হাজার কোটি টাকা লেনদেন

:: আপডেট: ২০২০-০৯-১৫ ০৮:৪১:১০


দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি পুঁজিবাজার। দীর্ঘদিন মন্দাভাবের পর ফের চাঙ্গা হতে শুরু করেছে বাজার। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারী, স্টেকহোল্ডারসহ সংশ্লিষ্টরা নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। হারানো পুঁজি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে অনেক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর।

বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নতুন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত কমিশন পুঁজিবাজারের উন্নয়নে অনেক ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফলে দীর্ঘ মন্দার পর উত্থানে ফিরেছে বাজার। প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে সূচক ও লেনদেন। এ অবস্থায় বাজার স্থিতিশীল রেখে লেনদেনের পরিমান ৩ হাজার কোটি থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত করার লক্ষ্যে কাজ করছে কমিশন। বর্তমানে লেনদেন হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করেছে।

সম্প্রতি বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, উন্নত দেশগুলোতে পুঁজিবাজারই হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের মূল উৎস। পুঁজিবাজার থেকে টাকা নিয়ে সেই সব দেশগুলোতে বড়, ছোট ও মাঝারি- সব ধরনের ব্যবসা হয়। সে সব দেশের পুঁজিবাজারে সাধারণ জনগণই মূল টাকা দেয় আর তখনই অর্থনীতি গতিশীল হয়। আমরা সেই স্বপ্নই দেখছি। আমরা চাই আমাদের পুঁজিবাজার উন্নত দেশগুলোর পুঁজিবাজারের মত হবে। এজন্য বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে দৈনিক ৩ হাজার কোটি থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা লেনদেনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন।

বাজার বিশ্লেষকরা বলেন, ধারাবাহিক পতনের মধ্যেই করোনাভাইরাসের থাবা লাগে পুঁজিবাজারে। অর্থনীতির অন্যান্য সেক্টরের মতো পুঁজিবাজারও মুখ থুবরে পড়ে। এরই মধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। যোগদানের পরেই বিনিয়োগবান্ধব বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি। প্রায় দুই মাস বন্ধ থাকার পর ১ জুলাই পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হয়। তার নেওয়া ইতিবাচক সিদ্ধান্তে আস্থা ফিরে আসে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। সক্রিয় হন সাইড লাইনে থাকা বিনিয়োগকারীরা। বাড়তে থাকে লেনদেন ও সূচক।  তার সময়ে ইতোমধ্যে লেনদেন বেড়েছে প্রায় ১ হাজারের উপরে। প্রায় প্রতিদিনই বাজারে বাড়ছে লেনদেন। প্রতিদিন যেখানে গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ কোটি লেনদেন হতো’ সেখানে আজ ১ হাজার কোটি টাকার উপরে লেনদেন হচ্ছে।

বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস গত রোববার সূচক ও লেনদেন উভয়ই বেড়েছে। এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন ছাড়ায় ১৩ শত কোটি টাকা। আর পুঁজিবাজারে ফিরে পায় ৮ হাজার ৭১ কোটি ১৬ লাখ ৭৩ হাজার টাকা বাজার মূলধন।

রোববার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৮২ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ৫ হাজার ৯৪ দশমিক শূন্য ৫ পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক ১২ দশমিক ১৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ১১৭০ দশমিক ৬৬ পয়েন্টে। আর ডিএসই-৩০ সূচক ১৬ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট বেড়ে হয় ১৭৫৬ দশমিক ৮৮ পয়েন্ট।

এদিন ডিএসইতে ১ হাজার ৩২৯ কোটি ৭২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৩০৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা বেশি।। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ২৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকার।

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে সূচক ও লেনদেন বাড়লেও দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার সূচক, টাকার পরিমাণে লেনদেন এবং বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর কিছুটা কমেছে।

এদিন ডিএসই এক্স সূচক আগের দিনের চেয়ে ২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫০৯২ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক দশমিক ২৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১১৭০ পয়েন্টে এবং ডিএসই–৩০ সূচক দশমিক ২৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৭৫৬ পয়েন্টে।

দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৫৬টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৪৩টির, কমেছে ১৭৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৮টির।

ডিএসইতে আজ টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১৪৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। যা আগের দিন থেকে ১৮০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা কম। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৩২৯ কোটি ৭২ লাখ টাকার।

অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ৪ দশমিক ৫৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৫২৩.৪৩ পয়েন্টে।

এদিন সিএসইতে হাত বদল হয়েছে মোট ২৭২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১১৭টির, কমেছে ১২২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৩টির দর। আজ সিএসইতে ৩৯ কোটি ২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।

এদিকে বাজারের সামান্য এই পতনকে স্বাভাবিকভাবেই দেখছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, সূচক ওঠানামা করবে পুঁজিবাজারের জন্য এটা স্বাভাবিক। বেশি পরিমানে সূচক পতন হলে সেটা অস্বাভাবিক হতো।

সানবিডি/আরএম/