কয়লার বিকল্প এলএনজি হতে পারে না

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৯-১৪ ২২:৩১:২৮


দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উৎপাদনে কয়লার বিকল্প হিসেবে কোনোভাবেই তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ব্যবহার করা ঠিক হবে না। কারণ, এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ভবিষ্যতে আরও বেড়ে যাবে; পরিবেশ দূষণও খুব বেশি বন্ধ হবে না। তাই পরিবেশ দূষণকারী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে সরে এসে বিকল্প হিসেবে এলএনজি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন কোনোভাবেই ঠিক হবে না। বরং কয়লা থেকে জ্বালানি উৎপাদন না করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে।

আজ সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বেসরকারি খাতের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা বর্জন: সরকারি উদ্যোগ ও কতিপয় সুপারিশ’ শীর্ষক ভার্চুয়াল মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব পরামর্শ উঠে আসে। ভার্চুয়াল মিডিয়া ব্রিফিংযে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপনা করেন সিপিডির সিনিয়র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। এছাড়া বক্তৃতা করেন সিপিডির সম্মানিত ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান।

এ ব্যাপারে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘দূষণমুক্ত ও পরিবেশ বান্ধব জ্বালানি ব্যবহার করতে হবে। আর এইক্ষেত্রে কয়লা বর্জন করলেই দূষণমুক্ত জ্বালানি ব্যবহার নিশ্চিত করা যাবে না। এই পরিপ্রেক্ষিতে সিপিডি সরকারের সাম্প্রতিক বিভিন্ন পদক্ষেপ পর্যালোচনাসহ গ্যাস এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেছে।’

তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক কোভিড অতিমারির পরিপ্রেক্ষিতে এবং অধিকমাত্রায় দূষনমুক্ত জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় প্রাথমিক জ্বালানি পরিবর্তনের বিষয়টি পর্যালোচনা করছে। এই পর্যালোচনার ফলাফল হলো- পরিবেশ দূষণকারী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে সরে আসা।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে পরিবেশ দূষিত হলে বৈশ্বিকভাবেও একটা চাপ পড়ে। তাই টেকসই ও পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।’

অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এক সময় সোলার বিদ্যুৎ প্যানেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ অনেক বেশি হলেও বর্তমানে তা সহনীয় অবস্থানে চলে আসছে। বর্তমানে সোলার প্যানেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ৭০ দশকের তুলনায় ১০০ ভাগের এক ভাগে এবং ৯০ এর দশকের তুলনায় ৫০ ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে। আগামীতে সোলার প্যানেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ আরও কমে যাবে। ফলে পরিবেশবান্ধব বিকল্প জ্বালানি হতে হবে সোলার প্যানেল। কিন্ত সেটা কোনোভাবেই কয়লার বিকল্প এলএনজি জ্বালানি নয়।’

তিনি বলেন, ‘ধীরে ধরে কয়লা বিদ্যুৎ জ্বালানি থেকে সরে এসে নতুন নতুন পরিকল্পনা নিতে হবে। সেক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব এবং উৎপাদন খরচ উভয় দিকে নজর রাখতে হবে।’

ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘এলএনজির যে খরচ তা অনেকটা কয়লার মতো। বর্তমানে গ্যাস ও কয়লা সাড়ে ৪২ শতাংশ জ্বালানি উৎপাদনে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মধ্যে বর্তমানে ৩৫ শতাংশ কয়লাকে যদি পর্যায়ক্রমে এলএনজি খাতে রূপান্তরিত করা হয় তাহলে জ্বালানি উৎপাদনে এককভাবে এলএনজির ব্যবহাব দাঁড়াবে ৭০ শতাংশ। ফলে জ্বালানি খাত বহুমুখীকরণ না হয়ে এক হয়ে যাবে। যা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য কোন সুফল বয়ে আসবে না। বরং এই খাতে ভারসাম্য নষ্ট হবে।’

তিনি বলেন, ‘এলএনজি দিয়ে জ্বালানি উৎপাদন করা হলে এবং এর সঙ্গে যদি অভ্যন্তরীণ প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করা যায় তাহলে ইউনিট প্রতি উৎপাদন কম হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো- দেশে গ্যাস উৎপাদন কমে গেলে তখন এলএনজি দিয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ পড়বে ১২ থেকে ২০ টাকা। ফলে এটাকে কোনোভাবেই ভবিষ্যতে সস্তা জ্বালানি বলা যাবে না।’

এসময় তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি সরকার ৬ টাকা ২৮ পয়সা দরে প্রতি ইউনিট সোলার প্যানেল বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য চুক্তি করছে। ভবিষ্যতে সোলারের দাম আরও কমবে এবং দক্ষতা বাড়বে। চীন, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর ও বাংলাদেশ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। কয়লার পরিবর্তে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে তাদের উৎসাহিত করতে হবে।’ ভারি শিল্পকারখানাও সৌর বিদ্যুৎ দিয়ে চালানো সম্ভব বলে জানান তিনি।