গভীর সংকটের মুখে ইইউ’র চিনি শিল্প

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৯-১৯ ০৮:৫২:২৬


বিশ্বজুড়ে ছোবল হানা করোনাভাইরাসের কারণে গভীর সংকটের গভীর সংকটের মুখে পড়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) চিনি শিল্প। চলতি বছর ব্রিটেনসহ ইইউভুক্ত দেশগুলোয় খাদ্যপণ্যটির সম্মিলিত উৎপাদনে ধস নামতে পারে। একই সঙ্গে এসব দেশ থেকে ২০২০ সালে কমতে পারে চিনি রফতানিও। করোনা ছাড়াও এ বছর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আখ ও সুগার বিটের ক্ষেতে ক্ষতিকারক পতঙ্গের আক্রমণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় কাঁচামালের সংকট থেকে এবার ইইউতে চিনি উৎপাদন ও পণ্যটির রফতানি কমে আসছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। খবর রয়টার্স ও এগ্রিমানি।

এ ব্যাপারে ফ্রান্সের চিনি উৎপাদনকারীদের কেন্দ্রীয় সংগঠন সিজিবির পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২০ সালে ব্রিটেনসহ ইইউভুক্ত দেশগুলোয় সব মিলিয়ে ১ কোটি ৬১ লাখ টন চিনি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছর এসব দেশে সম্মিলিতভাবে ১ কোটি ৭০ লাখ টন চিনি উৎপাদন হয়েছে। সেই হিসাবে, এক বছরের ব্যবধানে ব্রিটেনসহ ইইউভুক্ত দেশগুলোয় খাদ্যপণ্যটির উৎপাদন কমে আসতে পারে ৯ লাখ টন।

মূলত ফ্রান্স, পোল্যান্ড, জার্মানি, পর্তুগাল, স্পেনসহ শীর্ষ উৎপাদনকারী দেশগুলোয় চলতি বছর সুগার বিট ও আখ উৎপাদন মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সিজিবির বিশ্লেষক টিমোথি ম্যাসন বলেন, ক্ষতিকারক পতঙ্গ অ্যাফিডের আক্রমণে শুধু ফ্রান্সে সুগার বিট উৎপাদন গত পাঁচ বছরের গড়ের তুলনায় ১৫ শতাংশ কমে গেছে। মোটামুটি একই চিত্র ইউরোপের অন্যান্য দেশে। করোনা মহামারীর কারণে আমদানি করা সুগার বিট দিয়ে চিনিকলগুলোর পূর্ণ উৎপাদন সক্ষমতা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ সীমিত। এ কারণে চলতি বছর ইইউভুক্ত দেশগুলোয় চিনির সম্মিলিত উৎপাদন কমে আসছে।

এই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, উৎপাদিত সুগার বিট দিয়ে ইউরোপের দেশগুলো চিনির পাশাপাশি জৈব জ্বালানি উৎপাদন করে। গত বছর এসব দেশ সম্মিলিতভাবে সুগার বিট দিয়ে সব মিলিয়ে ৩ কোটি ৮৬ লাখ টন ইথানল উৎপাদন করেছিল। চলতি বছর কাঁচামাল সংকটের কারণে ইইউভুক্ত দেশগুলোয় জৈব জ্বালানিটির সম্মিলিত উৎপাদনের পরিমাণ ৩ কোটি ১৭ লাখ টনে নেমে আসতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে সিজিবি।

এদিকে দেশভিত্তিক হিসাবে চলতি বছর ফ্রান্সে সব মিলিয়ে ৪১ লাখ টন পরিশোধিত চিনি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। গত বছর দেশটিতে ৪৯ লাখ টন পরিশোধিত চিনি উৎপাদন হয়েছে। সেই হিসাবে, এক বছরের ব্যবধানে দেশটিতে খাদ্যপণ্যটির উৎপাদন কমে আসতে পারে আট লাখ টন।

সিজিবির পূর্বাভাস অনুযায়ী, জার্মানিতে চলতি বছর সব মিলিয়ে ৪১ লাখ ২০ হাজার টন পরিশোধিত চিনি উৎপাদন হতে পারে। গত বছর দেশটিতে মোট ৪২ লাখ ৩০ হাজার টন পরিশোধিত চিনি উৎপাদন হয়েছিল। একইভাবে পোল্যান্ডে চলতি বছর পরিশোধিত চিনির উৎপাদন ২২ লাখ টনে নেমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছর দেশটিতে খাদ্যপণ্যটির উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২৩ লাখ টন।

এদিকে মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর ইইউভুক্ত দেশগুলো সম্মিলিতভাবে ১ কোটি ৭২ লাখ ৫৩ হাজার টন চিনি উৎপাদন করতে পারে। এক বছরের ব্যবধানে এসব দেশে খাদ্যপণ্যটির উৎপাদন কমতে পারে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। গত বছর এসব দেশ সম্মিলিতভাবে ১ কোটি ৭৯ লাখ ৮২ হাজার টন চিনি উৎপাদন করেছিল, যা আগের বছরের তুলনায় ১৪ দশমিক ১২ শতাংশ কম। আর ২০১৮ সালে ইইউর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ২ কোটি ৯ লাখ ৩৮ হাজার টন চিনি উৎপাদন হয়েছিল।

কাঁচামাল সংকটের কারণে উৎপাদন খাতে মন্দা ভাবের জের ধরে চলতি বছর ইইউভুক্ত দেশগুলো থেকে সম্মিলিতভাবে ১২ লাখ টন চিনি রফতানি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ইউএসডিএ, যা আগের বছরের তুলনায় রেকর্ড ৩৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ কম। ২০১৯ সালে এসব দেশ সব মিলিয়ে ১৯ লাখ ৫০ হাজার টন চিনি রফতানি করেছে। আর ২০১৮ সালে ইইউর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ৩৯ লাখ ২০ হাজার টন চিনি রফতানি হয়েছিল।

সানবিডি/এনজে