ব্যাংকঋণ পরিশোধে ডিসেম্বর পর্যন্ত সুযোগ পেল ঋণগ্রহীতারা

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৯-২৯ ০৮:০০:২১


দেশে ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতিতে ব্যাংকঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্য দুই দফায় ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছাড় দিয়েছিলো বাংলাদেশ ব্যাংক।তবে ব্যবসায়ীরা ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের কিস্তি স্থগিত রাখার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। একই দাবি ছিল খেলাপি ঋণ কম এমন ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদেরও। কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত থাকলেও শেষ পর্যন্ত তাদের এ দাবি মেনে নিয়ে ব্যাংকের ঋণগ্রহীতাদের জন্য আবারো সুসংবাদ দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনো গ্রাহক ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করলে তাকে খেলাপি দেখানো যাবে না। এর ফলে পুরো বছরের জন্যই কিস্তি পরিশোধে ছাড় পেলেন ঋণগ্রহীতারা।

করোনাকালীন সময়ে বিধ্বস্ত অর্থনৈতিক দুর্যোগে ব্যবসায়ীদের সুরক্ষা দিতে সবার আগে ঋণের কিস্তি পরিশোধ শিথিল করে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত কিস্তি পরিশোধ না করলেও কোনো ঋণ খেলাপি না করার নির্দেশনা দেয়া হয় মার্চের শেষ সপ্তাহেই। পরে এ সময়সীমা বাড়িয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। সে সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই ঋণ পরিশোধের মেয়াদে আরো ছাড় দিয়ে সোমবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এই প্রজ্ঞাপনে  বলা হয়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ঋণের শ্রেণীমান যা ছিল, আগামী ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সময়ে উক্ত ঋণ তদাপেক্ষা বিরূপমানে শ্রেণীকরণ করা যাবে না। তবে কোনো ঋণ শ্রেণীমানের উন্নতি হলে তা যথাযথ নিয়মে শ্রেণীকরণ করা যাবে। ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি বিদ্যমান মেয়াদি (স্বল্পমেয়াদি কৃষিঋণ ও ক্ষুদ্রঋণসহ) ঋণের বিপরীতে ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর সময়কালীন প্রদেয় কিস্তিগুলো বিলম্বিত হিসেবে বিবেচিত হবে।

এতে আরো বলা হয়, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে সংশ্লিষ্ট ঋণের কিস্তির পরিমাণ ও সংখ্যা পুনর্নির্ধারিত হবে। পুনর্নির্ধারণকালে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত যতসংখ্যক কিস্তি প্রদেয় ছিল তার সমসংখ্যক কিস্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনো কিস্তি পরিশোধিত না হলেও ওই কিস্তিগুলোর জন্য মেয়াদি ঋণগ্রহীতা খেলাপি হিসেবে বিবেচিত হবেন না।

শ্রেণীকরণের সময়সীমা ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করায় ভালো গ্রাহকরাও ব্যাংকের কিস্তি পরিশোধ করবেন না বলে মনে করেন ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক মঈনউদ্দীন। তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থের কথা বিবেচনায় রেখে ঋণ পরিশোধে বাধ্যবাধকতার সময়সীমা ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের স্বার্থের কথা চিন্তা করলে এ নির্দেশনা ভালো। কিন্তু সমস্যা হলো, নতুন নির্দেশনার ফলে এ বছর কোনো ঋণ খেলাপি হওয়ার সুযোগ থাকল না। এতে সমস্যাগ্রস্ত ঋণগুলো চিহ্নিত হবে না। ব্যাংকগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে ২০২১ সালে। আগামী বছর খেলাপি ঋণ এক লাফে দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জারীকৃত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি তারিখে বিদ্যমান চলমান ও তলবি ঋণগুলো এবং ওই তারিখ থেকে ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে সৃষ্ট তলবি প্রকৃতির ঋণের মেয়াদ/সমন্বয়ের তারিখ বিদ্যমান মেয়াদ হতে ১২ মাস অথবা ২০২০-এর ৩১ ডিসেম্বর তারিখ (যেটি আগে ঘটে) পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। এসব সুবিধা চলাকালীন ঋণের ওপর সুদ আরোপের ক্ষেত্রে এতত্সংক্রান্ত বিদ্যমান নীতিমালা বলবৎ থাকবে। অর্থাৎ, ঋণ শ্রেণীকরণ, পুনঃতফসিলীকরণ অথবা বিশেষ সুবিধার আওতায় পুনঃতফসিলকৃত ঋণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের যেসব বিধিনিষেধ রয়েছে, সেসব ঋণের বিপরীতে নগদ আদায় ব্যতীত আরোপিত সুদ আয় খাতে স্থানান্তর করা যাবে না। এ সময়ে ঋণের ওপর কোনোরূপ দণ্ড সুদ বা অতিরিক্ত ফি আরোপ করা যাবে না বলেও প্রজ্ঞাপনে স্পষ্ট বার্তা দেয়া হয়েছে।

সানবিডি/এনজে/৮:০০/২৯.০৯.২০২০