এসএলআর সংরক্ষণ থেকে অব্যাহতি পেল পদ্মা ব্যাংক
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২১-০৩-৩১ ২০:০৩:৪১
এসএলআর সংরক্ষণে ব্যর্থ হওয়ায় পদ্মা ব্যাংকের (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) ৮৯ কোটি টাকা জরিমানা মওকুফ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে দুই বছরের বেশি সময়ের জন্য বিধিবদ্ধ জমা বা Statutory Liquidity Ratio (এসএলআর) সংরক্ষণ থেকে অব্যাহতি পেল ব্যাংকটি।
গত ৩১ অক্টোবর ২০১৭ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ পরযন্ত মেয়াদের জন্য ব্যাংকটিকে এসএলআর সংরক্ষণ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এই সময়ে ব্যাংকটি এসএলআর সংরক্ষণ করতে না পারায় যে ৮৯ কোটি টাকা জরিমানার মুখে পড়েছিল সেটি মওকুফ হয়ে গেল।
এই অব্যাহতি দেয়ার লক্ষ্যে উক্ত সময়ের জন্য ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৩৩ ধারা থেকেও অব্যাহতি পেয়েছে পদ্মা ব্যাংক। বুধবার এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার ইস্যু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারিভশন (ডিওস)।
সার্কুলারের সাথে সংযুক্ত ডেপুটি গর্ভনর এ.কে.এম সাজেদুর রহমান খান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকারের সাথে পরামর্শক্রমে পদ্মা ব্যাংককে এই অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
এরআগে ২০১৭ ও ২০১৮ সময়ের জন্য সিআরআর ও এসএলআর সংরক্ষণে ব্যর্থ হওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ১৪৪ কোটি টাকা জরিমানা মওকুফের আবেদন করেছিল পদ্মা ব্যাংক।
২০১৯ সালের নভেম্বরে করা ওই আবেদনে সাড়া দিয়ে এসএলআর সংরক্ষণের জন্য অব্যাহতি দেয়া হলো। তবে সিআরআর এর জন্য ৫৫ কোটি টাকা জরিমানা মওকুফ হয়নি।
ব্যাংকগুলোতে গচ্ছিত আমানতের ৪ শতাংশ নগদ অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে থাকা ব্যাংকগুলোর একাউন্টে জমা রাখতে হয়, এটি নগদ জমা বা Cash Reserve Ratio (সিআরআর) হিসেবে পরিচিত।
অন্যদিকে আমানতের ১৩ শতাংশ অর্থ নিরাপদ বিনিয়োগ যেমন-স্বর্ণ, সরকারি ট্রেজারি বিল বা বন্ডে বিনিয়োগ করতে হয়। আমানতকারীদের সুরক্ষার জন্য আইনে এমন বিধান আছে।
সময়ে সময়ে সিআরআর ও এসএলআর হারে পরিবর্তন করে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক। কোভিড মোকাবিলায় নগদ অর্থের সংকট যেন না হয় সেজন্য গেল বছর এই হার কমানো হয়েছিল।
বর্তমানে কনভেনশনাল ব্যাংকগুলোর জন্য সিআরআর ও এসএলআর হার সম্বিলিতভাবে ১৭ শতাংশ, অন্যদিকে ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য এই হার ৯.৫ শতাংশ।
কোন ব্যাংক নির্ধারিত হারে সিআরআর সংরক্ষণে ব্যর্থ হলে ঘাটতি অর্থের ৫ শতাংশ হারে প্রতিদিন জরিমানা গুণতে হয়।
অন্যদিকে এসএলআর সংরক্ষণে ব্যর্থ হলে ঘাটতি অর্থের স্পেশাল রেপোসুদ অনুযায়ী জরিমানা গুণতে হয়। বর্তমানে স্পেশাল রেপোরেট ৭.৭৫ শতাংশ।
২০১৭ সালে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে দেওয়া এক প্রতিবেদনে সাবেক ফারমার্স ব্যাংককে দেশের আর্থিক খাতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল।
ঋণ কেলেঙ্কারিসহ নানা অনিয়মের কারণে ২০১৮ সালের প্রথম দিকে সরকারের হস্তক্ষেপে ডুবতে থাকা এই ব্যাংকটির বেশিরভাগ শেয়ার সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী এবং আইসিবি কিনে নয়। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে ব্যাংকটি নাম পাল্টে হয়ে যায় পদ্মা ব্যাংক।
খেলাপি ঋণের ভারে জর্জরিত ব্যাংকটির ২০২০ সাল শেষে খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা, যা বিতরণ করা মোট ঋণের ৬১.৬ শতাংশ। গেল বছর শেষে ব্যাংকখাতে খেলাপির হার ছিল প্রায় ৮ শতাংশ।