হঠাৎ শিওরক্যাশ বন্ধে গ্রাহকদের ভোগান্তি

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২১-০৪-১৭ ১৬:৪২:৩৪


রূপালী ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘শিওরক্যাশ’গত মার্চ মাস থেকে বন্ধ হয়ে আছে। এতে বিপাকে পড়েছে কয়েক লাখ গ্রাহক, যাদের অধিকাংশই এই সেবার মাধ্যমে কোনো না কোনো সরকারি ভাতা পেয়ে আসছিলেন। শিওরক্যাশের মাধ্যমে উপবৃত্তির টাকাও পাচ্ছিল প্রাথমিক শিক্ষার্থীরা।

সেবাটি এত দিন পরিচালনা করে আসছিল প্রগতি সিস্টেমস। আর তাদের সঙ্গে ছিল রাষ্ট্রমালিকানাধীন রূপালী ব্যাংক। এ ছাড়া বাংলাদেশ কমার্স, যমুনা এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস পরিচালনা করে আসছিল তাদের মাধ্যমে। কিন্তু সেবাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গ্রাহকদের সঙ্গে সঙ্গে এখন এই ব্যাংকগুলোও পড়েছে বিপাকে।

সেবা বন্ধ হওয়ায় এখন এই চারটি ব্যাংকের মাধ্যমে বৃত্তি, ভাতা বিতরণ, ভর্তুকি প্রদানসহ নানা ক্ষেত্রে যে সেবা দেয়া হচ্ছিল সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হওয়ায় আগে শিওরক্যাশের কাছে ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা কর্মসূচি, আখচাষিদের ভর্তুকি, পল্লী বিদ্যুতের বিল, বিভিন্ন স্কুল-কলেজের বেতনসহ বিভিন্ন সেবা ছিল।

তবে শিওরক্যাশ সবচেয়ে বেশি পরিচিতি পেয়েছিল প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি এবং শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করে। শিওরক্যাশের সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগ দিয়ে এই উপবৃত্তি বিতরণ বিষয়ে সরকার জটিলতায় পড়লে তখন ডাক বিভাগের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’ কে বেছে নেয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

ইতিমধ্যে ‘নগদ’শিওরক্যাশের সময়ের জমে থাকা একটি প্রান্তিকের ভাতা বিতরণ করেছে এখনকার সময়ের জনপ্রিয় এমএফএস অপারেটর ‘নগদ’। শিওরক্যাশের সেবা বন্ধ হওয়ায় সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে রূপালী ব্যাংক। কারণ, ব্যাংকটি শিওরক্যাশের গ্রাহক ও সেবার আকার বাড়িয়েছে। রূপালী ব্যাংকসহ বাংলাদেশ কমার্স, যমুনা এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের সেবা যাতে চালু থাকে, সে জন্যে ‘নগদ’এর পক্ষ থেকে এই চার ব্যাংককে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে শিওরক্যাশের প্রধান নির্বাহী শাহাদাত খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। শুক্রবার রাতে তাকে ফোন দিলে তিনি খুদেবার্তা পাঠাতে বলেন। পরে খুদেবার্তার মাধ্যমে জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি। এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে শিওরক্যাশের সেবা বন্ধ হওয়ার বিষয়ে রূপালী ব্যাংকের পক্ষ থেকে সব শাখাকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়।

মূলত ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে এসেই সেবাটি ব্যাহত হতে শুরু করে। তবে তার আগেই গত কয়েক মাস ধরেই সেবাটি গুটিয়ে আনছিল প্রগতি সিস্টেমস। সাম্প্রতিক সময়ে মাঠপর্যায়ে কয়েক দফা কর্মী ছাঁটাই করেছে অপারেটরটি। বর্তমান সময়ে এই খাতের প্রতিযোগিতা আর প্রযুক্তির নতুন উদ্ভাবনে অনেকটা পিছিয়ে পড়াতেই ব্যবসায় সুবিধা করতে পারছিল না অপারেটরটি।

পেমেন্ট সিস্টেম অপারেটর (পিএসও) হিসেবে লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান প্রগতি সিস্টেমস লিমিটেড এখন তাদের লাইসেন্সকে পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডারে (পিএসপি) রূপান্তর করতে আবেদন করেছে। আর এর শর্ত হিসেবই পিএসও সেবা আগে বন্ধ করতে হতো। সেবাটি বন্ধ হওয়ার আগেও তাদের সঙ্গে প্রায় ১০ লাখ সক্রিয় গ্রাহক ছিল।

তবে সব মিলে ২ কোটি ১৪ লাখ ২৭ হাজার গ্রাহক শিওরক্যাশে অ্যাকাউন্ট খুলেছিল। একসময় মাসে কয়েক শ কোটি টাকার লেনদেন হলেও জানুয়ারিতে তা নেমে আসে ১৮০ কোটি টাকায়। আর ফেব্রুয়ারিতে যা কমে হয় ১১৪ কোটি টাকায়।