ভিক্ষাবৃত্তির জন্য শিশু চুরি করে চেহারা বিকৃতি করে দেয় তারা
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২১-০৫-০২ ১৩:১৭:০৭
রাজধানী ঢাকায় ভিক্ষাবৃত্তিতে ব্যবহারের জন্য শিশু চোর চক্রের ভয়ঙ্কর কাণ্ড! রাস্তায় থাকা শিশুকে চকলেটের প্রলোভন দেখিয়ে কোলে তুলে নিয়ে যতো দ্রুত সম্ভব উধাও হয়ে যান তারা। সম্প্রতি এমনই একটি ঘটনা ঘটে রাজধানী ঢাকার বংশাল এলাকায়। ওই ঘটনা তদন্তে নেমে চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটন করেছে পুলিশ।
ঘটনার বিস্তারিত জানতে গিয়ে জানা গেছে, মানুষের ফেলে দেয়া জিনিসপত্র আর কাগজ কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন সুমা। প্রতিদিনের মতো গত ২৫ এপ্রিলও দুই বছরের সন্তান রাশিদাকে সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন তিনি। কিন্তু সেদিন কাগজ কুড়ানোর ফাঁকেই সন্তানকে হারিয়ে ফেলেন এই মা।
শিশু রাশিদা আসলে হারিয়ে যায়নি। চকলেটের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে অপহরণ করে নিয়ে যান নীলা বেগম (৩০) নামের এক নারী। তিনি মূলত শিশু চোর চক্রের সক্রিয় সদস্য। তার সঙ্গে রয়েছেন আরও কয়েকজন। তারা পরিকল্পিতভাবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে শিশু অপহরণ করে থাকেন।
সম্প্রতি যে শিশুটিকে অপহরণ করে তারা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন, সেই শিশুটিকে মারধর করে বিভিন্ন কৌশলে চেহারা বিকৃত করে দেন তারা। তাদের উদ্দেশ্যে হলো- শিশুটিকে ভিক্ষাবৃত্তিতে ব্যবহার করবেন।
অপহরণ হওয়ার পর শিশুটির মায়ের করা সাধারন ডায়েরি তদন্ত করেত গিয়ে অবশেষে ৬ দিন পর শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশ। একই সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয় অপহরণে জড়িত নীলা বেগমসহ ১০ বছরের একটি মেয়েকে।
শনিবার (১ মে) রাতে ঢাকার কেরানীগঞ্জ মডেল থানার কদমতলী এলাকা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার এবং ওই ২ জনকে গ্রেপ্তার করে রাজধানীর বংশাল থানা পুলিশ। পরে তাৎক্ষণিকভাবে শিশুটিকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
এ বিষয়ে বংশাল থানা পুলিশ জানায়, মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা সুমা (২৫) রাস্তায় ভাঙারি জিনিস ও কাগজ কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। গত ২৫ এপ্রিল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাসা থেকে বেরিয়ে কাগজ ও ভাঙ্গারি কুড়ানোর জন্য বংশালে যান। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পুরাতন বংশাল রোডের মাথায় মেয়েকে বসিয়ে রেখে কাগজ সংগ্রহ করছিলেন সুমা। কিছুক্ষণ পরে দেখতে পান তার মেয়ে আর সেখানে নেই, কোথায় যেনো উধাও হয়ে গেছে!
আশে-পাশে অনেক খোঁজাখুজি করে না পেয়ে বংশাল থানায় একটি নিখোঁজ জিডি (নং-১১৬১) করেন তিনি। ওই জিডির পরিপ্রেক্ষিতে শিশু রাশিদাকে খুঁজে পেতে ৪ সদস্যের টিম গঠন করে পুলিশ। তদন্তে ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দুজনকে শনাক্ত করা হয়।
এর ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে শনিবার (০১ মে) রাত সাড়ে ৮টার দিকে কদমতলীর শহিদনগর এলাকা থেকে শিশু রাশিদাকে উদ্ধার এবং দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.শাহীন ফকির জানান, আসামি নীলা বেগম ও আরেকজন পরস্পরের যোগসাজশে শিশুটিকে চকলেট খাইয়ে কৌশলে অপহরণ করে নিয়ে যায়। তাদের উদ্দেশ্য ছিলো শিশুটিকে ভিক্ষাবৃত্তিতে ব্যবহার করা। আর সেজন্য মারধর করে শিশুটির চেহারা বিকৃত করে দেয়া হয়।
ওসি বলেন, উদ্ধার শিশুটির শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। পুলিশের তৎপরতায় তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয় মায়ের কোলে।
এদিকে, এ ঘটনায় জড়িত দু’জনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ চক্রের অন্য যারা রয়েছে তাদেরও খুঁজছে পুলিশ। রোববার (০২ মে) গ্রেপ্তারকৃত দু’জনকে আদালতে হাজির করা হবে বলে জানা গেছে।
সানবিডি/এএ