শেয়ার ট্রেডিংয়ে ইচিমুকো ক্লাউড কিভাবে সাহায্য করতে পারে?

:: প্রকাশ: ২০২১-১১-০১ ২০:০২:৪৮


সব ধরনের মার্কেটেরই কমন কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে- যেমন সেখানে ক্রেতা বিক্রেতার সমাগম হতে হবে, ডিম্যান্ড এন্ড সাপ্লাই এর উপর নির্ভর করে প্রাইস উঠানামা করবে এবং তার ফলে কোন সময় প্রাইস আপট্রেন্ড আর কখনো ডাউনট্রেন্ড পরিলক্ষিত হবে। বস্তত শেয়ার মার্কেটও সেসবের ব্যতিক্রম নহে। তবে সম্ভবত ব্যতিক্রম যেটুকু তা হলো এখানে আস্থা- অনাস্থা এবং আবেগের বড় বেশী ভূমিকা থাকে। এ মার্কেটে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সামান্য আস্থার সংকট দেখা দিলেই সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়েন কিভাবে নিজের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করবেন। এ অবস্থায় হয়তো দেখা যায় যে শেয়ারের কোন ক্রেতাই নেই – দাম তখন দ্রুত পড়ে যায়। আবার যখন কোন কিছুর দাম ক্রমাগত বাড়ে তখন অতি উচ্চ দামে কেনার জন্য সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সে অবস্থা যত অযৌক্তিকই হোক না কেন তাতে অধিকাংশের কোন ভ্রক্ষেপ থাকে না। তাই শেয়ার মার্কেটে অধিকাংশ সময়ে হয় আপট্রেন্ড কিংবা ডাউনট্রেন্ড বিরাজ করতে দেখা যায়।

শেয়ার মার্কেট সম্পর্কে সবাই একমত এই প্রবাদ বাক্যে – Trend is Your Friend। কথাটা খাঁটি একারণে যে ট্রেন্ড বুঝতে পারলে বাই কিংবা সেল এর সিদ্ধান্ত নেয়া যায় এবং ট্রেন্ড এর সাথে নিজের পজিশন গ্রহণ করে লাভ করা যায়। কিন্ত প্রশ্ন হলো যে অধিকাংশ সাধারন বিনিয়োগকারী সে ট্রেন্ডের শুরু কোথায় তা কি বুঝতে পারেন? তারা যখন কোন শেয়ারের আপট্রেন্ড বুঝে কিনতে শুরু করেন তখন হয়তো ট্রেন্ড শেষ হওয়ার পথে, যখন নেপথ্যে মার্কেট প্লেয়াররা মূলত শেয়ার বিক্রি করা শুরু করেছেন। বলা হয়ে থাকে যে সাধারন বিনিয়োগকারীরা ভেড়ার পালে সংখ্যা দেখে শেষ পর্যন্ত ঢুকে পড়েন ঠিকই কিন্ত সঠিক সময়ে পাল থেকে সটকে পড়ার কৌশল জানেন না বা তাদের সুনির্দিষ্ট কোন কৌশল না থাকার ফলে অতি লোভের বশবর্তী হয়ে যথাসময়ে শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। আবার যেখানে শেয়ার কেনা উচিত ছিল সেখানে না কিনে যখন বিক্রির সময় প্রায় এসে গেছে তখন সে শেয়ারে তারা এন্ট্রি দিয়ে থাকেন। সংগত কারণেই এ মার্কেটে এসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হন ক্ষুদ্র ও সাধারন বিনিয়োগকারীরা। মার্কেট ম্যাকানিজম সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞান ও বিনিয়োগ শিক্ষা ছাড়া শেয়ার মার্কেটে আসা এবং গুজবে বিভ্রান্ত হয়ে শেয়ার কেনা-বেচা প্রবণতার ফলে একদিকে যেমন এ মার্কেটের স্থিতিশীলতা নষ্ট হচ্ছে অপরদিকে তেমনি সাধারন বিনিয়োগকারীরা নিজেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।

বাস্তবে বিনিয়োগ শিক্ষার অন্যতম প্রধান দিক হলো প্রাইস ট্রেন্ডকে সঠিকভাবে বুঝা। সে ট্রেন্ডকে বুঝতে সাপোর্ট ও রেজিষ্ট্যান্স কি তা জানা দরকার। সাপোর্ট ও রেজিষ্ট্যান্স প্রাইস জানতে পারলে তার ব্রেক-আউট সম্পর্কেও ধারনা পাওয়া যায়। সাপোর্ট হলো সেই প্রাইস যেখান থেকে তা সাধারনত আর নীচে নামে না। যদি নীচে নামে তবে তা সাপোর্ট ব্রেক-আউট বলে বিবেচিত হয়। প্রাইস সাধারনত সাপোর্ট লেভেলে আসার পর হয় স্থির থাকে কিংবা আবার তা উপরে যেতে থাকে। আর রেজিষ্ট্যান্স হলো উপরের দিকে সেই প্রাইস লেভেল যেখান থেকে প্রাইস ব্রেক-আউট না হলে আর বাড়ে না, বরং ক্রমান্বয়ে তা নীচের দিকে নামতে থাকে বা একই রেঞ্জে ঘুরাঘুরি করতে থাকে। সাপোর্ট ও রেজিষ্ট্যান্স বুঝতে একটি উপমা দেয়া যেতে পারে। ধরুন আপনি একটি ৫ তলা বিল্ডিংয়ের ৩ তলায় অবস্থান করছেন। বুঝার সুবিধার্থে ধরে নিই যে বিল্ডিংয়ের ছাদ কংক্রিটের পরিবর্তে বাঁশের চাটাই দিয়ে তৈরী।

এখন আপনি ৩ তলায় দাঁড়িয়ে এখখন্ড পাথর উপরে ছুড়ে মারলেন। সেই ছোড়া পাথরটা ৩য় তলার ছাঁদ পর্যন্ত যেতেও পারে আবার নাও পারে। ছোড়ার শক্তির উপর নির্ভর করে আসলে অনেকগুলো অপশন হতে পারে। যেমন – (১) শক্তি পর্যাপ্ত না থাকায় তা ৩য় তলার ছাঁদ পর্যন্ত পৌছাল না, (২) ৩য় তলার ছাঁদ স্পর্শ করলো এবং তারপর নীচে নেমে এলো, (৩) শক্তি বেশী হওয়ায় তা ৩য় তলার ছাঁদ ভেদ করে ৪র্থ তলার ছাঁদ পর্যন্ত পৌছাল, (৪) পাথর ছোড়ার শক্তি এত বেশী যে তা ৫ম তলার ছাঁদ স্পর্শ করে ফেললো। তাহলে ৩য় তলার ছাঁদকে ১ম রেজিষ্ট্যান্স, ৪র্থ তলার ছাঁদকে ২য় রেজিষ্ট্যান্স এবং ৫ম তলার ছাঁদকে ৩য় রেজিষ্ট্যান্স ধরা যেতে পারে। আর ৩য় তলার ছাঁদ যখন ভেদ করলো তখন তা ১ম ব্রেক-আউট, পরেরগুলো ২য় বা ৩য় ব্রেক-আউট। পাথর যদি উপরের দিকে না ছুড়ে আপনি তা নীচের দিকে ছুড়েন তবে অনেকটা একই রকম ফলাফল হবে।

ছোড়ার শক্তির উপর নির্ভর করে নিম্নের অপশনগুলো হতে পারে। যেমন – (১) শক্তি পর্যাপ্ত না থাকায় তা আপনার পায়ের নীচে অবস্থিত ২য় তলার ছাঁদ এর উপরের অংশ স্পর্শ করলো এবং তারপর উপরে উঠে গেল, (২) শক্তি বেশী হওয়ায় তা ২য় তলার ছাঁদ ভেদ করে ১ম তলার ছাঁদ এর উপর দিক পর্যন্ত পৌছাল, (৩) পাথর ছোড়ার শক্তি এত বেশী যে ১ম তলার ছাঁদ ভেদ করে তা নীচ তলার ফ্লোর স্পর্শ করে ফেললো, (৪) পাথর ছোড়ার শক্তি অত্যধিক বেশী হওয়ার ফলে তা নীচ তলার ফ্লোর ভেংগে মাটিতে ঢুকে গেল। তাহলে ২য় তলার ছাঁদ এর উপরের দিক হলো ১ম সাপোর্ট, ১ম তলার ছাঁদ এর উপর অংশ ২য় সাপোর্ট, নীচ তলার ফ্লোর ৩য় সাপোর্ট এবং মাটির নীচের অংশ ৪র্থ সাপোর্ট বলে বিবেচিত হবে। আর ২য় তলার ছাঁদ যখন ভেদ করলো তখন তা ১ম ব্রেক-আউট, পরেরগুলো ২য় বা ৩য় বা ৪র্থ ব্রেক-আউট। লক্ষ্যনীয় যে ব্রেক-আউট হতে অধিক শক্তির দরকার হচ্ছে, আবার ১ম ব্রেক-আউটের তুলনায় পরের ব্রেক-আউটগুলোতে সে শক্তির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বেশী লাগছে- ঠিক যেমনভাবে শেয়ারের বড় পতনে বা উর্ধ্বমূখী বৃদ্ধির সময়ে সাপ্লাই ও ডিম্যান্ডের গ্যাপ বেশী হওয়ার দরকার হয়।

শেয়ার মার্কেট থেকে ট্রেডিং করে লাভ করার জন্য প্রয়োজন যে কোন শেয়ারের প্রাইস সাপোর্ট বা রেজিষ্ট্যান্স জোন কোথায় এবং সময়ের সাথে সাথে কিভাবে তার পরিবর্তন হচ্ছে সেটি সঠিকভাবে বুঝতে পারা। এজন্য দরকার টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটরের সাহায্য নিয়ে প্রাইস চার্টকে বিশ্লেষণ করার সক্ষমতা অর্জন। বর্তমান যুগের সুবিধা হলো যে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট প্রযুক্তির অভাবনীয় বিপ্লবের কল্যাণে অতি সহজেই শেয়ার রিলেটেড অনেক ধরনের টেকনিক্যাল চার্ট দেখা যায়। আর অসুবিধা হলো যে শত শত টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর সম্পর্কে জানার সীমাবদ্ধতা ও তাদের মধ্য থেকে উপযুক্ত ইন্ডিকেটর চয়েস করার বিড়ম্বনা ।
এ নিবন্ধ লেখকের ব্যক্তিগত অভিমত এই যে শত শত ইন্ডিকেটর থাকা সত্বেও ইচিমুকো ক্লাউড সবচেয়ে বেশী নির্ভরযোগ্য এবং ইচিমুকোর মত অন্য কোনটি তেমনভাবে নির্ভরযোগ্য নয়। Simple Moving Average (SMA), Moving Average Convergence Divergence (MACD), Relative Strength Index (RSI), Bollinger Bands, Candlestick Patterns, Average Directional Index (ADI), Average True Range (ATR), Parabolic Stop and Reverse (SAR), ইত্যাদি নামে অনেক অনেক ইন্ডিকেটর থাকলেও ইচিমুকো ক্লাউড নানা দিক দিয়ে শ্রেষ্ট ও অনন্য।

সব দিক না উল্লেখ করেও বলা যায় যে অন্তত তিনটি কারণে এটি অন্যগুলোর চেয়ে উৎকৃষ্ট- (১) ফিউচার বা অগ্রবর্তী ক্লাউড এর রং শেয়ারের সম্ভাব্য ভবিষ্যত প্রাইস সম্পর্কে ধারনা দেয়, (২) চিক্যু স্প্যান (বর্তমান পিরিয়ডের ক্লোজিং প্রাইসকে ২৬ পিরিয়ড পূর্বের প্রাইসের উপরে বসানো) এর সাহায্যে বর্তমান ট্রেন্ড এর কনফার্মেশন নিশ্চিত হয়, এবং (৩) শেয়ারের প্রাইস সাপোর্ট ও রেজিষ্ট্যান্স সম্পর্কে অনুমান করার দরকার পড়ে না এবং ট্রেডারের টাইপ বিবেচনায় ইচিমুকো ক্লাউড ও সংশ্লিষ্ট লাইনকে সাপোর্ট কিংবা রেজিষ্ট্যান্স হিসাবে ধরা যায়। তাছাড়া, মার্কেট ট্রেন্ড এর দিক ও শক্তি সম্পর্কেও ইচিমুকো যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য ধারণা দিতে সক্ষম ।

ইচিমুকো ক্লাউড স্ট্র্যাটেজীতে অনেকগুলো রেখা থাকে। যেমন-Chikou Span (CS), Tenken Sen (TS) বা ইংরেজীতে Conversion Line (বিগত ৯ পিরিয়ডের মধ্যে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন প্রাইসের গড়), Kijun Sen (KS) বা ইংরেজীতে Base Line (বিগত ২৬ পিরিয়ডের মধ্যে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন প্রাইসের গড়), Senkou Span A (বিগত ২৬ পিরিয়ডের মধ্যে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন প্রাইসের গড়, যা এখনকার প্রাইস লেভেল থেকে ২৬ পিরিয়ড পরে বসানো অর্থাৎ time shifted forward করা) ও Senkou Span B ( বিগত ৫২ পিরিয়ডের মধ্যে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন প্রাইসের গড়, যা এখনকার প্রাইস লেভেল থেকে ২৬ পিরিয়ড পরে বসানো অর্থাৎ time shifted forward করা) যা দিয়ে ক্লাউড তৈরী হয়ে থাকে। প্রাইস যখন উর্ধ্বমূখী তখন Tenken Sen কে ১ম সাপোর্ট, Kijun Senকে ২য় সাপোর্ট, Senkou Span A কে ৩য় সাপোর্ট এবং Senkou Span B কে ৪র্থ সাপোর্ট হিসাবে ধরা যেতে পারে। আর প্রাইস যখন নিম্নগামী তখন Tenken Sen কে ১ম রেজিষ্ট্যান্স, Kijun Senকে ২য় রেজিষ্ট্যান্স, Senkou Span A কে ৩য় রেজিষ্ট্যান্স এবং Senkou Span B কে ৪র্থ রেজিষ্ট্যান্স হিসাবে ধরা যেতে পারে। যারা স্বল্পমেয়াদে ট্রেড করেন তাদের জন্য ৩য় বা ৪র্থ সাপোর্ট কিংবা রেজিষ্ট্যান্স পর্যন্ত অপেক্ষা করা যৌক্তিক বিবেচিত না হওয়ারই কথা। কারণ সেক্ষেত্রে ক্রয়কৃত প্রাইস থেকে সাপোর্ট বা রেজিষ্ট্যান্স লেভেলের প্রাইস বেশ খানিকটা দূরে থাকতে পারে, যেখানে লোকসান বেশী হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই যারা মোটামুটি স্বল্পমেয়াদে ট্রেড করেন এবং খুব কম ঝুঁকি নিতে পছন্দ করেন তাঁরা Kijun Senকে আপট্রেন্ডের সময় সাপোর্ট এবং

ডাউনট্রেন্ডের সময় রেজিষ্ট্যান্স হিসাবে ধরে নিয়ে ট্রেডিং সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কিন্ত ইচিমুকো ছাড়া পাশ্চাত্যের অন্যান্য টেকিনিক্যাল ইন্ডিকেটরে প্রাইস ট্রেন্ড দেখে কিছুটা ধারনা করে সাপোর্ট বা রেজিষ্ট্যান্স লাইন কিংবা জোন ড্র করার দরকার হয়, যা অনেকটাই সাবজেকটিভ ধরনের বলা যেতে পারে।

নীচের চিত্রে ডিএসইএক্স ইনডেক্স এর দৈনিক প্রাইস চার্টে সাপোর্ট বা রেজিষ্ট্যান্স কেমন হয় এবং ইচিমুকো ক্লাউডে বাই-সেল সিগন্যাল কিরুপ হতে পারে তা দেখানো হলো (বিগত ২৮ অক্টোবর’২১ পর্যন্ত ড্যাটা ব্যবহার করে)।

উপরের চিত্রে ক্যান্ডলস্টিক প্রাইস চার্টের সাথে ইচিমুকো ক্লাউড স্ট্র্যাটেজী সংশ্লিষ্ট কয়েকটি রেখার প্রকৃত আকৃতি কেমন হয় তা দেখানো হয়েছে। সেখানে আকাশী নীল রংয়ের রেখা দ্বারা Chikou Span (CS), লাল রংয়ের রেখা দ্বারা Kijun Sen (KS), সবুজ রংয়ের রেখা দ্বারা Tenken Sen (TS), হালকা সবুজ রংয়ের রেখা দ্বারা Senkou Span A (SSA), হালকা লাল রংয়ের রেখা দ্বারা Senkou Span B (SSB) এবং ওস্যান সবুজ কিংবা হালকা লাল রংয়ের দ্বারা Kumo বা মেঘ দেখানো হয়েছে। প্রতিটি রেখা কিভাবে তৈরী হয় সে সম্পর্কে ইতিমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে। আর SSA এবং SSB রেখার মান বসানোর পরে তার পার্থক্য দিয়ে হয় Kumo বা মেঘ। SSA এর মান SSB রেখার মান থেকে বেশী হলে সবুজ মেঘ হবে এবং তার উল্টোটা হলে লাল মেঘ হবে।

চিত্রে ডিএসইএক্স ইনডেক্সের ডেইলি প্রাইস চার্টে ইচিমুকো ইন্ডিকেটর বসানো হয়েছে। ডিএসইএক্স ব্যতীত অন্য যে কোন শেয়ার প্রাইস দিয়েও তা করা যেতো। তবে ডিএসইএক্স দ্বারা ওভারঅল মার্কেট ট্রেন্ড সম্পর্কে সঠিক ধারনা পাওয়া যায় বিধায় সেটা ব্যবহার করা হয়েছে।

চিত্রানু্যায়ী আমরা লক্ষ্য করি যে ২০২১ সনের জানুয়ারী মাস থেকে সাধারনভাবে এবং জুন মাস থেকে বিশেষভাবে ডেইলি চার্ট অনুসারে মার্কেট আপট্রেন্ডে রয়েছে। তাই এখানে Tenken Sen, Kijun Sen, SSA এবং SSB রেখাসমূহ যথাক্রমে ১ম সাপোর্ট, ২য় সাপোর্ট, ৩য় সাপোর্ট এবং ফাইনাল তথা ৪র্থ সাপোর্ট হিসাবে কাজ করবে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, জুনের শেষার্ধে প্রাইস সামান্য কারেকশন হয়ে Tenken Sen রেখা (১ম সাপোর্ট) ভেদ করলেও ২য় স্তরের সাপোর্ট অর্থাৎ Kijun Senকে ভেদ করে নীচে নামেনি বা ব্রেক-আউট হয়নি। সেটা ছিল খুব সামান্য কারেকশন- মাত্র ৬ দিন পরেই প্রাইস Tenken Sen রেখা ভেদ করে উপরে উঠে এবং সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিন পর্যন্ত তা ক্রমাগতভাবে উপরে উঠে। চিত্রানু্যায়ী, অক্টোবরের ২য় সপ্তাহ থেকে প্রাইস কমতে শুরু করে এবং প্রথমে তা Tenken Sen এবং তারপর Kijun Sen রেখার নীচে নেমে আসে। সেটাকে বলা যায় ১ম ও ২য় স্তরের সাপোর্ট লাইনের ব্রেক-আউট। যারা সফল ট্রেডার হবেন তাদেরকে অবশ্যই স্টপ-লস মেকানিজম কার্যকর করা উচিত। উল্লেখ্য, ইচিমুকো ক্লাউড স্ট্র্যাটেজী অনুসারে Kijun Sen হচ্ছে একটি শক্তিশালী সাপোর্ট লাইন -অন্তত স্বল্পমেয়াদী ট্রেডারদের জন্য এবং প্রাইস তার নীচে নেমে আসলেই ট্রেডারদের সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। তাই Kijun Sen ব্রেক-আউটের পরে শেয়ার বিক্রি করে দেয়া ছিল বুদ্ধিমানের কাজ। আর যারা দীর্ঘমেয়াদের বিনিয়োগকারী হবেন তাঁরা SSA এমনকি SSB কে সাপোর্ট লাইন ধরে স্টপ-লস ঠিক করতে পারেন।

যাহোক, পরবর্তী সময়ে আমরা দেখলাম যে ডিএসই’তে প্রাইসের আরো পতন হলো এবং এক পর্যায়ে ৩য় স্তরের সাপোর্ট লাইন অর্থাৎ SSA রেখারও নীচে যেয়ে তা মেঘের মধ্যে ঢুকে গেল।

চিত্রে ডান দিকের সর্বশেষ ক্লাউড (ফিউচার ক্লাউড) এখনো গ্রীন আছে, অর্থাৎ ফিউচার ট্রেন্ড পজিটিভ আছে, যদিও আপ-ট্রেন্ডের শক্তি অনেক কম (SSA ও SSB মানের পার্থক্য কমে এসেছে; ফলে আগামীতে SSA এর মান থেকে SSB মান বেশী হওয়ার ফলে ক্লাউড রেড হয়েও যেতে পারে)। তবে ইচিমুকোতে অনেকগুলো ইন্ডিকেটরের সমন্বয়ে সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করতে হয় এবং সে অনুযায়ী বাই-সেল এর সিদ্ধান্ত নিতে হয়। উপরের চিত্র বর্তমানে যা দেখাচ্ছে তাতে ডেইলি প্রাইস মেঘের মধ্যে অবস্থান করছে। এ অবস্থাকে কনসোলিডেশন বা ট্রেন্ডলেস বা রেঞ্জ মার্কেট বলা হয়, যেখানে ইচিমুকো সঠিক সিগন্যাল দেয় না। এ অবস্থায় বাই কিংবা সেল না করে অপেক্ষা করাই শ্রেয়। আগামীতে প্রাইস চার্ট দেখে সুনির্দিষ্ট আপ কিংবা ডাউন ট্রেন্ড কনফার্ম হওয়ার পরেই ট্রেড সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত হবে।

ইচিমুকো ক্লাউডে সুনির্দিষ্ট সাপোর্ট ও রেজিষ্ট্যান্স লাইন পাওয়া ছাড়াও বেশ কয়েকটা উপায়ে অনেকটা নির্ভরযোগ্য বাই ও সেল সিগন্যাল পাওয়া যায়। অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটরের তুলনায় এখানে ভুল সিগন্যালের পরিমাণ নগণ্য। তাছাড়া, ইচিমুকো স্ট্র্যাটেজী্কে MACD বা RSI এর মত টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর সমন্বয়ে ব্যবহার করা হলে বাই-সেল সিগন্যালের কার্যকারীতা আরো বেড়ে যায়। সেসব বিষয়ে বিস্তারিভাবে জানতে লেখকের রচিত “মেঘের আড়ালে সূর্য্যঃ ইচিমুকো ক্লাউডে শেয়ার ট্রেডিং” শীর্ষক বইটি পড়া যেতে পারে।

শফিকুল ইসলাম
Email: msislam86@yahoo.com