আগামী বছরই মার্কেটে আসছে দেশের তৈরি সফটওয়ার কনভে

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২১-১১-২৪ ১৭:০৮:৪১


বাসায় বসে অফিস! এ কেমন কথা। কীভাবে সম্ভব? দুই বছর আগেও এমন প্রশ্ন ছিলো মানুষের মনে। আবার অফিসে গিয়েই কাজ করতে হবে এই রীতি বাধ্যতামূলক থাকলেও করোনা পাল্টে দিয়েছে সেই রীতি। পরিবর্তন করে দিয়েছে মানুষের জীবন-যাপন।

বাড়িতে বসে কাজ করা মানেই যে খুশি তা কিন্তু নয়। করোনাভাইরাসের কারণে হোক বা অন্য কারণেই হোক, বাড়ি থেকে কাজের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পরিষ্কার যোগাযোগ ব্যবস্থা। আপনার ব্যবস্থাপক যেমন অফিসে সব সময় আপনার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারে, বাড়ি বসে কাজের ক্ষেত্রেও তাই হওয়া উচিত। সেই ভাবনা থেকেই সিনেসিস আইটি পরিষ্কার যোগাযোগ ও বাহিরের শব্দ মুক্ত ভার্চুয়াল অফিস কোলাবোরেশন প্লাটফর্ম কনভে (Convay) নিয়ে আসতে যাচ্ছে। আগামী বছরের প্রথম প্রান্তিকে আনুষ্ঠানিক ভাবে যাত্রা শুরু হবে প্লাটফর্মটির।

আরএনএন বেইজড নয়েজ সাপ্রেশন সিস্টেম কনভে (Convay) গড়ে তোলার ধারণা ও চ্যালেঞ্জ-এর গল্প নিয়ে কথা বলেছেন সিনেসিস আইটির গ্রুপ সিইও রূপায়ন চৌধুরী। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের জুলাইয়ে আমি যখন অস্ট্রেলিয়া চলে আসি, আসার পর পরই সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ি টিমের সদস্যদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ নিয়ে, কিভাবে আরও আমার প্রতিটা টিমের সাথে যোগাযোগ করে প্রকল্পগুলোকে ভালোমতো শেষ করা যায়। সেই সময় থেকে আমরা জুমের ব্যবহার শুরু করি। আমাদের সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের প্রধান শাহজালালও ওই সময় এক বছরের জন্য যুক্তরাস্ট্রে চলে যায়। পুরো টিম বাধ্য হয়ে রিমোট কোলাবোরেশন ব্যবহার করতে শুরু করি। মহামারীর আগে থেকে সিনেসিস ভিডিও কনফারেন্সিং এর ব্যবহার শুরু করে। তখন থেকে আমরা বুঝতে পারি এই রিমোট কোলাবোরেশন এখনো নতুন, এখানে অনেক কিছু দরকার। এই ইনোভেশন নিয়ে আমাদের মধ্যে চিন্তা শুরু হতেই চলে আসে মহামারী। জুম একেবারে মানুষের ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ল, সাথে জনপ্রিয় হওয়া শুরু করল অন্য কোলাবোরেশন টুলগুলোও। আমরা দেখতে থাকলাম এই টুলগুলো এখনো অনেক কিছু দিচ্ছে না।

পরবর্তীতে ২০২০ এর শুরুতে আমাদের কিছু প্রেডিকশন ছিল সামনের দিকে রিমোট কোলাবোরেশন কি রকম হবে, কি ইনোভেশন আসবে। আমাদের খুব ভাল লাগে সেই প্রেডিকশন এখন সত্য হতে দেখে। কিছু সাধারণ সমস্যার অসাধারণ সমাধান নিয়ে আমাদের Convay এর ইনোভেশন। প্রায় তিনটি মহাদেশের চারটি দেশ থেকে শুরু হয় এর উদ্ভাবন প্রক্রিয়া। চার দেশের মানুষজন এই ইনোভেশনে কাজ করছে।

একটু বলে নিই Convay আসলে একটা Virtual Collaboration Suite যেখানে ভিডিও কনফারেন্সিং, বিভিন্ন কোলাবোরেশন টুলস ও ভিজ্যুয়াল বোর্ডের সমন্বয়ে কর্মীদের মধ্যে খুবই কার্যকরী যোগাযোগ গড়ে তোলা যেন সবাই অসাধারণ সব ইনোভেশন নিয়ে আসে। সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয়েছে তথ্য নিরাপত্তায় যা জুমের একটা বড় দুর্বলতা (অসাধারণ সব ফিচার যা এখনো কোন ভিডিও কনফারেন্সিং এ নেই)। Convay তৈরি করা হয়েছে গ্লোবাল মার্কেটের জন্য। এখন অনেক দেশে ডাটা রেসিডেন্সি আইন আছে, এটার সফটওয়্যার আর্কিটেকচার দাঁড় করাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল আমাদের জানা মতে এখন শুধু মাত্র Slack এই সার্ভিসটি দেয়।

কনভে (Convay) তৈরির নানা চ্যালেঞ্জ নিয়ে তিনি বলেন, আমরা Convay এর শুরুতে বিপদে পড়ি ভিডিও কনফারেন্সিং এ, ২০/৩০ জনের বেশি মিটিং করতে পারি না, প্রচুর শব্দ আসে যা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এরপর আমাদের গবেষণা শুরু হয়। যেহেতু নয়েজ ক্যানসেলেশন আমাদের উদ্দেশ্য না, আমরা অন্য কোম্পানির সলিউশনস দেখতে থাকি। বিশ্বের এক নম্বর কোন্পানির খোঁজ পাই। জুম, গুগল, সিসকো সবাই এই কোম্পানির সলিউশনস ব্যবহার করে। যোগাযোগ করলাম। তাদের সেলস বিভাগের একজন যোগাযোগ করল। বলল, “আমরা এই সেবা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছি।” আমরা আবার গবেষণা শুরু করি। ডিজিটাল সিগন্যাল প্রসেসিং এর ফিল্ডটা এত বড় আমরা হিমশিম খেতে থাকি। কয়দিন পর পর সেই এক নম্বর কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করি। একটা ইমেইল দিলে ১০ দিন পর উত্তর দেয়। আমার বিশ্বাস, যেহেতু শেষ গুগলকে দিয়েছে আমাদেরকেও দিবে, হাল ছাড়ি না। এদিকে আমাদের গবেষণাও চলতে থাকে। এক পর্যায়ে আমরা একটা টেকনিক আবিষ্কার করি, যা দিয়ে একটা পর্যায় পর্যন্ত ভাল মিটিং করা যায় কিন্তু জুমের যে এক্সপেরিয়েন্স সেটা পাওয়া যাচ্ছে না।

কয়দিন পর পর আবার সেই কোম্পানিকে ইমেইল করি। আবারও একই উত্তর। এদিকে আমাদের গবেষণা এগুতে থাকে। দিশা পাই না। একদিন না পেরে ভাবছি শেষ ইমেইল লিখি। দিলাম ৫ লাইনের একটা ইমেইল, নিজেদের স্বপ্নের কথা। একদিনের মাথায় উত্তর এলো, একটা মিটিং এর শিডিউল দিয়ে।

মিটিং এ আসল সিলিকন ভ্যালির সেই কোম্পানির সেলসের একজন। একটু পরে যোগ দিলেন আরেকজন সিনিয়র। বুঝতে পারলাম খুব সিনিয়র একজন হবে। নামটা লিংকডইন’এ সার্চ দিলাম, এত বড় কোম্পানির সিওও আমার জুমে। নয়েজের জগতে অদ্বিতীয়। খুবই বিনয়ী। আমার কাছে আমাদের সম্পর্কে জানতে চাইল। আমাদের স্বপ্নের কথা বললাম। গল্প শুরু হয়ে গেল। অনেক ইনসাইট দিল। একদম শেষে বলল, “ তোমাদের আইডিয়া বেশ ভাল। দেখ আমাদের ডিমান্ড এত বেশি আমরা মিট করতে পারছি না। তোমাকে না বলছি না। তুমি শুরু করো। একটা ইউজার বেইজ চলে আসলে আমরা তোমার সাথে পার্টনারশিপ করব।”

মনটা খারাপ হয়ে গেল। পরদিন সকালে টিম নিয়ে বসলাম। বললাম আমাদের নয়েজ ক্যানসেলেশন আমাদের তৈরি করতে হবে। আমাদের আর উপায় নেই।

বেশ কয়েক মাস পরে সিনেসিসের কয়েকটি টিমে আমাদের Convay ভিডিও কনফারেন্সিং পরীক্ষণমূলক ভাবে ব্যবহার শুরু হয়। আমাদের হোম অফিস শেষ। আমাদের অফিসের লোকজন তাদের ডেস্ক থেকে বসে Convay মিটিংগুলো করে। নয়েজ একেবারে শুনা যায় না। শেষদিন আমাদের হেড অব সেলস মুনাজিলের সাথে মিটিং করছিলাম। উনি সিনেসিসে উনার ডেস্ক থেকে ফোন করেছিল। পাশে অনেক নয়েজ ছিল। কিন্তু Convay তে মিটিং হচ্ছিল কোনরকম একদম নীরবতায়, কোন নয়েজ নেই। তাকে একটু তাক লাগাবার জন্য বললাম, চলেন একই পরিবেশে জুমে মিটিং করি। সেখানে নয়েজে কথা বলা যাচ্ছে না। সে অবাক হয়ে বলল, “ভাইয়া আমাকে এখনই Convay বিক্রি করার জন্য দেন। এতো অনেক ভাল না শুধু, সিম্পলি অসাধারণ।”

নিজেদের গবেষণার আমাদের আরএনএন বেইজড নয়েজ সাপ্রেশন সিস্টেম। বানানোর ইচ্ছা ছিল না, এই ইনোভেশন আমাদের বাধ্য হয়ে আনতে হয়েছে।

কনভে (Convay) এর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে অনায়াসে এক সাথে ৩০০ জনের মিটিং করা যাবে। আমাদের লক্ষ্য ১২০০ জনের মিটিং হবে Convay তে। পরীক্ষণমূলক ভাবে সিনেসিসের কয়েকটি টিম Convay ব্যবহার করছে। আগামী বছরের প্রথম প্রান্তিকে সীমিত কিছু প্রতিষ্ঠানের জন্য মার্কেটে আসবে Convay। আরও অনেক পথ বাকি আমাদের, যেতে হবে বহুদূর।

এএ