সক্ষমতা বাড়াতে জাহিন স্পিনিংয়ে ৪ স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২১-১২-২০ ১৯:৪৩:০৬
পুঁজিবাজারে বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি জাহিন স্পিনিংয়ের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন ও সক্ষমতা বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরই ধারাবাহিকতায় কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে পরিচালনা পর্ষদে চার জন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
গত দুই বছর ধরে লভ্যাংশ প্রদান না করা, আর্থিক অবস্থার ধারাবাহিক অবনতি এবং বিনিয়োগকারীদের কখনোই নগদ লভ্যাংশ না প্রদান করার কারণে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে বিএসইসি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি জাহিন স্পিনিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে সিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া এ বিষয়টি ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে।
জাহিন স্পিনিংয়ের পরিচালনা পর্ষদে নিয়োগ দেওয়া স্বতন্ত্র পরিচালকরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সাউদ আহমেদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. তাসলিমা আক্তার ও জারমাটজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইসমত জেরিন খান।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার পর জাহিন স্পিনিংয়ের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা, আর্থিক কর্মকাণ্ড ও আর্থিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়েছে কিনা, তা যাচাই করে দেখবে বিএসইসি। আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে কোম্পানিটির ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা ও আর্থিক অবস্থায় কোনো পরিবর্তন না আসলে নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করবে কমিশন।
বিএসইসি’র চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, চলতি বছরের গত ৫ ডিসেম্বর বিএসইসি’র সঙ্গে জাহিন স্পিনিংয়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাহিন স্পিনিংয়ের পরিচালনা পর্ষদে চার জন ব্যক্তিকে স্বতন্ত্র পরিচালককে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হলো।
তথ্য মতে, গত ৫ ডিসেম্বর বিএসইসি’র সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা না করার কারণে হতাশা প্রকাশ করে কমিশন। আর জাহিন স্পিনিংয়ের টার্নওভার গত পাঁচ বছরের নেতিবাচক প্রবণতা, গত দুই বছর কোম্পানিটির ইপিএস ঋণাত্মক প্রবণতা এবং ২০১৫ সালে তালিকাভুক্তির পর থেকে কোম্পানিটি কোনো নগদ লভ্যাংশ দেয়নি বলে জানিয়েছে কমিশন। এ ছাড়া বৈঠকে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে থাকা শেয়ারধারণ ৪০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশে নেমে আসে বলে জানানো হয়। আর কোম্পানিটি আইপিও থেকে তহবিল সংগ্রহ করার পর থেকে সাধারণ বিনিয়োগকারীকে নগদ লভ্যাংশ বাবদ একটি পয়সাও দেয়নি। কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ বিপুল পরিমাণ তহবিল সরবরাহকারী সাধারণ বিনিয়োগকারীর কথা ভাবছে না বলেও জানায় কমিশন।
এদিকে বৈঠকে জাহিন স্পিনিং কর্তৃপক্ষ জানায়, দুটি কারখানার মধ্যে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ও ২০২১ সালের জানুয়ারিতে অগ্নি দুর্ঘটনার কারণে কোম্পানিটির কর্মক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে কোম্পানিটির আর্থিক অবস্থার অবনতি ঘটে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাহিন স্পিনিংয়ের কোম্পানি সচিব মহিন উদ্দিন বলেন, ‘জাহিন স্পিনিংয়ে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ প্রদান সংক্রান্ত বিএসইসি’র কোনো চিঠি এখনও হাতে পাইনি। তবে এ বিষয়ে ইতোপূর্বে বিএসইসি’র সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, পুঁজিবাজারে জাহিন স্পিনিং তালিকাভুক্ত হয় ২০১৫ সালে। ‘বি’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ১১৩ কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসেবে কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১১ কোটি ৩৮ লাখ ২৮ হাজার ৩৬৯টি। এর মধ্যে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকের হাতে ৩১.১০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২৯.৮৪ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ৩৯.০৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
২০২১ সালের পর্ষদ ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থ বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ দেয়নি জাহিন স্পিনিংয়ের পরিচালনা পর্ষদ। সমাপ্ত অর্থ বছরের কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ২.৫২ টাকা। আগের বছর একই সময়ে লোকসান হয়েছিল ৩.৩৯ টাকা। গত ৩০ জুন কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৬.২৫ টাকা।
কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আগামী ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। লভ্যাংশ সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট ২৪ নভেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। সোমবার (২০ ডিসেম্বর) ডিএসইতে জাহিন স্পিনিংয়ের শেয়ার সর্বশেষ ৮.৬০ টাকায় লেনদেন হয়েছে।
পুঁজিবাজারের সব খবর পেতে জয়েন করুন
Sunbd News–ক্যাপিটাল নিউজ–ক্যাপিটাল ভিউজ–স্টক নিউজ–শেয়ারবাজারের খবরা-খবর
এএ