দেড়মণ ওজনের বাঘা আইড়!
প্রকাশ: ২০১৬-০২-১১ ১১:০৯:০৬
চারশ’ বছরের ঐতিহ্য। বগুড়ার ইছামতি নদী তীরে মাঘ মাসের শেষ বুধবার বসছে মাছ মেলা। ‘পোড়াদহ মেলা’ নামে খ্যাত এই মেলায় এবার ৬২ কেজি ওজনের বাঘা আইড়সহ নদী ও সাগরের প্রচুর মাছ উঠেছে।
বুধবার গাবতলী উপজেলার পোড়াদহ মেলায় ঢল নেমেছিল লাখো মানুষের। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মানুষ এখানে মাছ কিনেছেন। তারা মেলা থেকে মিষ্টি, ফার্নিচার, তৈজষপত্রসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও কিনেছেন পছন্দ মতো।
মেলার ঐতিহ্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার মেলার পাশে মহিষাবান গ্রামে নারীদের নির্বিঘ্নে কেনাকাটার জন্য ‘বউমেলা’ অনুষ্ঠিত হবে।
এবার মেলায় প্রচুর মাছ উঠলেও দাম তুলনামুলক কম ছিল। ৬২ কেজি ওজনের বাঘা আইড় মাছ এক হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে ৯৩ হাজার টাকা দাম হাকা হলেও পরে এক হাজার ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
১০ কেজি ওজনের বোয়াল মাছ দুই হাজার টাকা কেজি দরে, ১৫ ওজনের চিতল দুই হাজার টাকা কেজি দরে, ২০ কেজি ওজনের কাতল দেড় হাজার টাকা কেজি দরে, রুই তিন থেকে পাঁচশত টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
তবে মেলায় মাছের ফরমালিন পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গরু-ছাগল জবাই ও গোশত বিক্রি করা হয়েছে।
ইউনিয়ন পরিষদের অনুমতি ছাড়াই জনৈক সাইফুল ইসলাম তার লোকজনদের দিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার কাছে ইচ্ছামত টোল আদায় করেছেন। এতে মেলায় আগতদের মাঝে প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
প্রতি কেজি মিষ্টি ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। ৮ কেজি ওজনের একটি ‘মাছ মিষ্টি’ বিক্রি হয় ৫০০ টাকায়।
এছাড়া মেলায় কাঠ ও স্টীলের আসবাবপত্র, কুল বড়ই, নানা ধরনের আচার, গরু, মহিষ ও খাসির গোশত, পেঁয়াজ, মরিচসহ সবধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী তোলা হয়েছিল।
চিত্ত-বিনোদনের জন্য মেলায় ছিল পুতুল নাচ, মোটরসাইকেল খেলা, যাদু, খেলা ও নাগোরদোলা।
স্থানীয় প্রবীণরা জানান, প্রতি বছর মাঘ মাসের শেষ বা ফাল্গুনের প্রথম বুধবার ‘পোড়াদহ’ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় জমিতে কোনো চাষাবাদ করা হয় না। মেলাকে সামনে রেখে আশপাশের প্রতিটি বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনে ভরে যায়। মেয়ে-জামাই, নাতি-নাতনি ও বিয়াই-বেয়ানসহ আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়া করা হয়।
তারা জানান, ঈদ বা অন্য কোনো উৎসবে দাওয়াত না দিলে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু পোড়াদহ মেলায় দাওয়াত দেয়া রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। মেলা একদিনের হলেও এর আমেজ সপ্তাহব্যাপী থাকে।
শুরু থেকে মহিষাবান গ্রামের মন্ডল পরিবার মেলা পরিচালনা করে আসছেন। বর্তমানে আবদুল মজিদ মন্ডল মেলাটি পরিচালনা করছেন।
পোড়াদহ মেলা শেষে বৃহস্পতিবার মহিষাবান গ্রামে ‘বউমেলা’ অনুষ্ঠিত হবে। এ মেলায় শুধু নারীরা কেনাকাটা করবেন। নানা বয়সের নারীরা স্বাচ্ছন্দে তাদের সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও প্রসাধনী কিনবেন।
স্থানীয় জাহিদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি গত ১৬ বছর ধরে বউমেলার আয়োজন করে আসছেন।
গাবতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিদ মাহমুদ জানান, প্রতি বছরের মত এবারও পোড়াদহ মেলায় সার্বিক নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস