‘ভালোবাসা’ এসেছেন ইউক্রেন থেকে!

আপডেট: ২০১৬-০২-১৪ ১০:২৭:৫২


Luvon‘হাতি!’ বলার সময় লুবোভ কোসতান্দার চোখেমুখে ছেলেমানুষি আনন্দ খেলে গেল। প্রশ্নটা ছিল, ‘বাংলাদেশে কোন দৃশ্য আপনাকে সবচেয়ে অবাক করেছে?’

উত্তরে বলছিলেন, যানজটের শহর ঢাকায় বিশাল বপু এক হাতির পিঠে মাহুত ঘুরে বেড়াচ্ছে, আচমকা এমন দৃশ্য তিনি আগে কোথাও দেখেননি। যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো, চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশে বেড়িয়েছেন, মডেলিং করেছেন। তাই লুবোভের ‘দেখা’ পৃথিবীটা ছোট, এমনটাও বলা যাচ্ছে না।

তিনি থাকেন ইউক্রেনের ক্রিমিয়ায়। সেখানকার একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। দ্বিতীয়বার স্নাতকোত্তর করছেন চিনের চ্যাংচুন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে, চীনা ভাষা ও সাহিত্যের ওপর। এই বিশ্ববিদ্যালয়েই তাঁর পরিচয় হয়েছিল বাংলাদেশি মেয়ে ফাহমিদা ওয়াদুদের সঙ্গে। গত বছরের অক্টোবরে বন্ধুর বিয়ের উৎসবে অংশ নিতে প্রথমবার বাংলাদেশে এসেছিলেন।

২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত নকশার মূল রচনার ‘থিম’ ছিল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ভাষাকে শ্রদ্ধা জানানোর এই সুযোগ লুবোভ হাতছাড়া করতে চাননি। তাই সানন্দে রাজি হয়েছেন মডেল হতে। বলছিলেন, ‘ভাষার জন্য বাংলাদেশিদের আবেগটা আমি বুঝি।’ ব্যাপারটা বুঝিয়ে বললেন এভাবে, ‘আপনাদের ইতিহাসের সঙ্গে আমাদের ইতিহাসের মিল আছে। ইউক্রেনের অফিশিয়াল ভাষা ইউক্রেনিয়ান। কিন্তু সেখানে রুশ ভাষার প্রভাব বেশি। ক্রিমিয়ায় আমার সমবয়সী বন্ধুরা আমি ইউক্রেনিয়ান ভাষা জানি শুনলে অবাক হয়। ওরা সবাই রুশ ভাষায় কথা বলে। কিন্তু নিজের দেশের ভাষা বলে আমার কাছে ইউক্রেনিয়ানটাই প্রিয়।’

ইউক্রেনিয়ান ছাড়াও তিনি রুশ, চীনা, স্প্যানিশ ও ফরাসি ভাষা জানেন। লুবোভের জানা ছয় নম্বর ভাষা হিসেবে কেন বাংলা যোগ হবে না? ‘নো নো! আই অ্যাম লার্নিং!’ বলে রীতিমতো প্রতিবাদ করলেন। বাংলা ক্রিয়ার কাল কত দূর শিখেছেন, সেটা বোঝাতে গিয়ে ভাঙা বাংলায় বললেন, ‘কড়ছি, কড়েছি, কড়েছিলাম!’

হাতি ছাড়াও অবধারিতভাবেই এই বিদেশিনীকে যা মুগ্ধ করেছে, তা হলো রিকশা। বলছিলেন, ‘আমি হাঁটতে খুব ভালোবাসি। এখানে হাঁটার রাস্তা খুব ভালো না। তাই রিকশায় চড়াই আমার কাছে হাঁটা। রিকশায় বসে আমি সবাইকে দেখি, আর আমাকেও সবাই দেখে!’

‘রিকশায় চড়িয়া হাঁটিয়া চলা’র জন্য লুবোভ অবশ্য একজন সঙ্গী পেয়ে গেছেন। ঢাকায় তাঁর একজন পরিচিত রিকশাওয়ালা আছেন, নাম খাদেমুল। ‘বিদেশি আপা’কে এখানে-ওখানে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব খাদেমুল অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পালন করেন। মজার ব্যাপার হলো, দুজন দুজনের ভাষা বোঝেন না। অথচ দিব্যি আলাপ চালিয়ে যেতে পারেন!

‘আমাদের ইউক্রেনিয়ান ভাষাটা খুব সুরেলা। ছোটবেলায় এই ভাষায় কত গল্প লিখেছি!’ বলতে গিয়ে স্মৃতিকাতর হলেন ক্রিমিয়ার অধিবাসী। লুবোভের ভাষাকে কিন্তু ভালোবাসার ভাষাও বলা যায়। রুশ ‘লুবোভ’ শব্দের অর্থ যে ভালোবাসা!

সানবিডি/ঢাকা/এসএস