নতুন বইয়ে প্রাণের উচ্ছ্বাস
আপডেট: ২০১৬-০২-১৯ ২২:০৭:৫১
দিন বাড়ার সাথে সাথে যেন পূর্ণতা পাচ্ছে মেলাপ্রাঙ্গণ। ১৯ তম দিনে বইপ্রেমিদের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো। পা রাখার জন্য ছিলো না তিল পরিমাণ জায়গা। বইপ্রেমিরা এক প্রাঙ্গণ থেকে অন্য প্রাঙ্গণে ছুটে চলেছেন নিজেদের পছন্দের বইয়ের খোঁজে।
টিএসসি গেট থেকে সারি সারি যে লোকপথ তৈরি হয়েছে, অন্যদিকে বিপরীত পার্শ্বে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ছুঁয়ে নদীর মতো যে মানুষের ঢল বেঁকে গেছে সেটা সিরিয়ার কোনো শরণার্থী শিবির নয়, এটি অমর একুশে বইমেলার টানে ছুটে আসা বইপ্রেমীদের লাইন।
আজ শুক্রবার মেলায় রাস্তার দুই পাশে এভাবেই জনস্রোত চোখে পড়লো। বিশাল লাইনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে বইপ্রেমীরা ঢুকেছেন মেলায়। তবুও তাদের মুখে নেই বিরক্তির কোনো ছাপ।
প্রাইভেট একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন শুকরান আলী। লাইনের বিশৃঙ্খলার কথা উল্লেখ্য করে বলেন, সেই কখন দাঁড়িয়ে আছি। কেউ না কেউ গেটের কাছে গিয়ে লাইন ক্রস করে চলে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখের সামনেই এমনটা হচ্ছে, কখন যে মূল প্রান্তে যাবো ভেবে পাচ্ছি না। বইমেলা একপাশে করার দাবি জানিয়ে শুকরান বলেন, পুরো মেলাটা যদি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করা যেত তাহলে ঘোরাঘুরি কম হতো। এখন পছন্দের সব বই একপাশ থেকে কিনতে পারলেও একটি বইয়ের জন্য বাংলা একাডেমি প্রান্তে যেতে হয়। আর এরজন্য ধরতে হয় দীর্ঘ লাইন।
লাইনে দাঁড়ানো মিরপুর থেকে আসা মাহবুব করিম বলেন, ভালো লাগছে এতবড় লাইন দেখে। শুক্রবার ভিড় হবে জেনেও এলাম। কারণ ঢিলেঢালা মেলার চেয়ে সবার উপস্থিতিতে বইকেনা ও ঘুরে দেখার মজাই আলাদা।
সরকারি চাকরিজীবী সানজিদা আক্তার বলেন, এই লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে হাঁপিয়ে উঠেছি। বইয়ের প্রতি ছোট থেকেই ভালো লাগা। সেই ভালো লাগা থেকেই প্রতিবছর বইমেলায় আসি। সব ভুলে যাবো যদি পছন্দের বইটা কিনতে পারি। গুলতেকিন খানের ‘আজো কেউ হাঁটে’ বইটি কিনব বলে ডেমরা থেকে এসেছি।
তিনদিন টানা ছুটি। দুই দিন সরকারি ছুটির সঙ্গে মিলেছে একুশে ফেব্রুয়ারির ছুটি। এজন্য শুক্রবার মেলায় উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। মেলায় ভিড় যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে বিক্রিও। যেসব প্রকাশক ও বিক্রেতা এতদিন বিক্রি হয়নি বলে আক্ষেপ করছিলেন তারাও এখন জানাচ্ছেন আশার কথা। মেলার দিন যত গড়াচ্ছে ততই যেন পূর্ণ যৌবন পাচ্ছে বাঙালির প্রাণের এই উৎসব। মেলার আয়োজক ও বিক্রেতারা আশা করছেন আগামী কয়েকদিন মেলায় ভিড় আরও বাড়বে, সঙ্গে বাড়ছে বই বিক্রিও।
আজ মেলায় নতুন বই এসেছে ২৩৬টি। এরধ্যে নুরুদ্দদিনের অন্তরের দহন জ্বালা, আহসান মালেকের মেঘের সাথে এ মন মাতে, উর্মী রহমানের সাদা ঘোড়া, হাফিজ আল ফারুকীর বসন্তের এই মাতাল সমীরনে, শেখ আব্দুল হাকীমের সার্কাস, অপরেশ বন্দোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক বিজ্ঞান, ভজন সরকারের রেড ইন্ডিয়ানদের সাথে বসবাস, এরশাদ হুসাইনের বৃষ্টির মুখোমুখি, সাহিদের লাশকাটা ঘর ও প্রিন্স আশরাফের এক ডজন রহস্য গল্পসহ বিভিন্ন বই।
অমর একুশে উদযাপন উপলক্ষে আজ সকাল ১০.০০ টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় শিশু কিশোর সঙ্গীত প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব। বাংলা একাডেমি মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী সুবীর নন্দী। বিচারকমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে ছিলেন শিল্পী কল্যাণী ঘোষ, সুজিত মোস্তফা ও আবু বকর সিদ্দিক।
বিকালে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় রাধারমন দত্ত: মৃত্যুবার্ষিকী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। কবি মোহাম্মদ সাদিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন শুভেন্দু ইমাম। আলোচনায় অংশগরহন করেন মাহফুজুর রহমান, বিশ্বজিৎ রায় এবং নৃপেন্দলাল দাশ।
আজ মেলা শুরু হয় বেলা ১১ টায় এবং শেষ হয রাত ৮ টায়। আগামীকাল শনিবারও মেলা চলবে বেলা ১১ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত।
সানবিডি/ঢাকা/আহো