পৃথিবীর কয়েকটি রহস্যময় দ্বীপ ও জায়গার গল্প
প্রকাশ: ২০১৬-০২-২১ ১৪:৩৩:০৬
পৃথিবীতে অনেক রহস্যময় জায়গা আছে যেগুলো সাধারণ জায়গার চেয়ে সম্পূর্ন ভিন্ন। এসব জায়গায় নিউটনের মহাকর্ষণ সূত্রও কম্পাসও কাজ করে না। যার কারণে এসব এলাকায় ঘটে নানা রকমের অদ্ভুত ঘটনা। প্রখ্যাত ভূতত্ত্ববিদ ইভান স্যান্ডারসনএ রহস্যময় অদ্ভুত জায়গাগুলোর নাম দিয়েছেন ‘ভোরটেঙ্’। যার অর্থ ঘূর্ণিপাক। সাধারণত ঘূর্ণিপাক পানিরই হয়ে থাকে। তবেস্যান্ডারসনের এ ঘূর্ণিপাক পানির নয়, চেতনা-বোধের। তবে বিজ্ঞানী ব্রাড স্টেইজার এ রহস্যময় জায়গাগুলোকে অভিহিতকরেছেন ‘উইন্ডো এরিয়া’ বলে।
এরকমই কিছু জায়গা হচ্ছে কুখ্যাত বারমুডা ট্রায়াঙ্গল, রহস্যদ্বীপ বাল্ট্রা, রহস্যময় সাইলেন্স জোন, ক্যালিফোর্নিয়ার নর্থ শাস্তারঅরিজনের একটি বিস্তীর্ণ এলাকা প্রভৃতি। তবে উইন্ডো এরিয়াই হোক আর ভোরটেঙ্ই যাই বলা হোক না কেন বিজ্ঞানীরা এজায়গাগুলোর অস্বাভাবিকত্ব আর অসামঞ্জস্যতা নিয়ে গবেষণা করেছেন দীর্ঘ দিন ধরে।
এ গবেষকদের অন্যতম একজনসাইকোলজিস্ট ড. স্টেনলি কিপার। তার মতে, এই এলাকায় প্রবেশ করলে মানুষ ও প্রাণীর মধ্যে ব্যাপক আচরণগত পার্থক্যদেখা যায়। অনেক সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষকে এখানে এসে উদ্ভট ও অস্বাভাবিক সব আচরণ করতে তিনি দেখেছেন। এখানে পা রাখামাত্র যে কোনও মানুষেরই মনে হবে, সে ভিন্ন এক চেতনার জগতে গিয়ে হাজির হয়েছে। পৃথিবীতে এ ধরনের বেশকিছুরহস্যময় অঞ্চলের সন্ধান পাওয়া গেছে যেখানে মহাকর্ষণ সূত্র প্রায় অকার্যকর।
বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় তারাএখানে আরও কিছু অদ্ভুত ব্যাপার প্রত্যক্ষ করেন। যেমন সমান উচ্চতাসম্পন্ন দুজন লোক এসব স্থানে গিয়ে পাশাপাশি দাঁড়ালেসামান্য দূর থেকে উত্তর দিকে ঘেঁষে দাঁড়ানো লোকটিকে খানিকটা খাটো বলে মনে হয়। ব্যাপারটি অবিশ্বাস্য সন্দেহ নেই,তবে বিজ্ঞানীরা এর ব্যাখা হিসেবে বলেন, একটি শক্তিশালী ম্যাগনেটিক ঘূর্ণিপাক কাজ করছে জায়গার ভেতর, যার প্রভাবেএসব অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে। এখানে পানি ঢাললে উপরের দিকে গড়াতে থাকে অথচ পানির ধর্মই হচ্ছে নিচের দিকে গড়িয়েনামা। এখানে আগুন জ্বালালে কোনও কারণ ছাড়াই ধোঁয়া শঙ্খাকারে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে আকাশের দিকে উঠতে থাকে।
এসবআজব ঘটনা ভোরটেঙ্গুলো ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও ঘটতে দেখা যায় না। এখানে কম্পাসের নির্দেশক কোনও একটিজায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আরও আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে পুরো এলাকায় কোনও জীবজন্তু নেই। নেই কোনওকীটপতঙ্গও। এ ধরনের রহস্যময় জায়গার আরেকটি হচ্ছে প্রশান্ত মহাসাগরের ‘বাল্ট্র দ্বীপ’। আসুন শোনা যাক রহস্যময় বাল্ট্রা দ্বীপের গল্প:
প্রকৃতির বিচিত্র সৃষ্টি রূপে বেশ কিছু দ্বীপ অমীমাংসিত রহস্য হিসেবে আজ পর্যন্ত বিস্ময়ের সৃষ্টি করে রেখেছে। এর মধ্যেসবচাইতে উল্লেখযোগ্য হল বাল্ট্রা। এটি ইকুয়েডরের গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের একটি বিশেষ দ্বীপ। বাল্ট্রা মূলতমানববসতিশূন্য একটি দ্বীপ। দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডরের নিকটবর্তী ১৩টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত ম্যালাপোগোস দ্বীপপুঞ্জ। আরএই ১৩টি দ্বীপের একটি হচ্ছে বাল্ট্রা। কিন্তু এখানকার অন্য ১২টি দ্বীপ থেকে বাল্ট্রা একেবারেই আলাদা, অদ্ভুত এবং রহস্যময়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কৌশলগতকারণে এই দ্বীপপুঞ্জের কয়েকটি দ্বীপে বিমানঘাঁটি স্থাপন করে মার্কিন সরকার। এরপর থেকেই বিশ্ববাসী জানতে পারে বাল্ট্রাদ্বীপের এই অদ্ভুত রহস্যের কথা।
এটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় দ্বীপপুঞ্জ হওয়ায় এখানে প্রচুর বৃষ্টি হয়। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো বৃষ্টিরএক ফোঁটাও পড়ে না বাল্ট্রাতে। কী এক রহস্যজনক কারণে বাল্ট্রার অনেক ওপর দিয়ে গিয়ে অন্যপাশে পড়ে বৃষ্টি। বাল্ট্রার অর্ধেক পার হওয়ার পর অদ্ভুতভাবে আর এক ইঞ্চিও এগোয় না বৃষ্টির ফোঁটা। বৃষ্টি যত প্রবলই হোক এ যেন সেখানকার একঅমোঘ নিয়ম।বাল্ট্রা বাদে এখানকার প্রতিটি দ্বীপেই আছে সিল মাছ, ইগুয়ানা, দানবীয় কচ্ছপ, গিরগিটিসহ বিরল প্রজাতিরকিছু পাখি।
কিন্তু বাল্ট্রার ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ দ্বীপে কোনও উদ্ভিদ, প্রাণী বা কীটপতঙ্গ নেই। বাল্ট্রা আর পাশের দ্বীপ সান্তাক্রজেরমাঝে তিন ফুট গভীর ও কয়েক ফুট চওড়া একটি খাল আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এ গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের কয়েকটিপরের দ্বীপে এয়ারবেস স্থাপন করে ইউএস সরকার। ফ্রেন্সিস ওয়ানার ছিলেন এখানকারই একজন দায়িত্বরত অফিসার। এদ্বীপপুঞ্জে থাকাকালীন অদ্ভুত সব ঘটনা আর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন তিনি। যেগুলো পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়প্রকাশিত হলে রীতিমতো বিস্ময়ের ঝড় ওঠে। তিনি লিখেছেন, ‘জীবনের সবচেয়ে বড় বড় বিস্ময়কর ঘটনাগুলোর মুখোমুখিহয়েছি আমি বাল্ট্রা দ্বীপে গিয়ে।
একটা নয় দুটো নয়, একের পর এক অসংখ্য অবিশ্বাস্য সব ব্যাপার ঘটেছে আমার চোখের সামনে। বিস্ময়ে হতবাক আমি শুধুদৃষ্টি মেলে দেখেই গেছি এসব, কোনও যুক্তিযুক্ত উত্তর বা ব্যাখ্যা খুঁজে পাইনি। সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের একটি শক্তি কাজ করছেদ্বীপটির ভেতর। যার প্রভাবে ঘটেছে একের পর এক এসব রহস্যময় ও অবিশ্বাস্য ঘটনা। বাল্ট্রাতে এলেই অস্বাভাবিক আচরণকরে নাবিক বা অভিযাত্রীর কম্পাস। সবসময় উত্তর দিক-নির্দেশকারী কম্পাস এখানে কোনো সময় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।আবার দিক-নির্দেশক কাঁটা ইচ্ছেমতো ঘুরতে থাকে অথবা উল্টোপাল্টা দিক নির্দেশ করে।
সবচেয়ে রহস্যজনক ব্যাপার হলোবাল্ট্রা দ্বীপের ওপর বিমান থাকাকালীন সময়েও এমন অদ্ভুত আচরণ করে কম্পাস। আবার দ্বীপ পার হলেই সব ঠিক। বাল্ট্রারআরেকটি অদ্ভুত দিক হল, এর মানসিক দিক। বাল্ট্রায় পা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যে কারও মাথা অনেক হালকা হয়ে যায়।অজানা-অচেনা কোন এক জায়গায় হারিয়ে যাওয়ার আশ্চর্য রকম অনুভূতি আচ্ছন্ন করে ফেলে মনকে। বেশিক্ষণ এ দ্বীপেথাকলে দ্বীপ থেকে চলে আসার পর কিছুদিন সেই আশ্চর্য অনুভূতি থেকে যায়। পরে অবশ্য আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যায়।
অদ্ভুতদ্বীপ বাল্ট্রায় কোন গাছ নেই। নেই কোনো পশুপাখি। কোনো পশুপাখি এ দ্বীপে আসতেও চায় না। জোর করে এলেও কোনোপশুপাখিকে বসতি করানো যায়নি। দেখা গেছে, বাল্ট্রাকে এড়িয়ে পাশের দ্বীপ সান্তাক্রুজের ধার ঘেঁষে চলছে প্রাণীগুলো। শুধুতাই নয়, উড়ন্ত পাখিগুলোও উড়তে উড়তে বাল্ট্রার কাছে এসেই ফিরে যাচ্ছে। দেখে মনে হয় যেন কোনো দেয়ালে ধাক্কাখাচ্ছে ওরা। এই দ্বীপের রহস্যের কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা এ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। অবশ্য এরিক ফন দানিকেন ও তারঅনুসারীরা যথারীতি তাদের স্বভাবসুলভ দৃষ্টিভঙ্গিতে সেই পৃথিবীর বাইরের ভিন্নগ্রহের তথাকথিত মানুষদের টেনে এনেছেন।কিন্তু বিজ্ঞানীরা আজো এ রহস্যের কোন কূলকিনারা করতে পারেননি । প্রযুক্তিগত দিক দিকে বিশ্ব আজ অনেক দূর এগিয়েগেছে। বিজ্ঞানীরা একদিন হয়ত এসব রহস্যের সমাধান মানুষের কাছে তুলে ধরবে।’
বোভেট দ্বীপ:
পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে রহস্যে ঘেরা বহু দ্বীপ-উপদ্বীপ। বোভেট নামে একটি দ্বীপ রয়েছে মেরু অঞ্চলে, সেইদ্বীপটিকে এযাবত্কালে সন্ধান পাওয়া দ্বীপের মধ্যে সবচেয়ে রহস্যময় আর দুর্গম বলা হয়। দ্বীপটিতে স্থলপথে যাওয়ার কোনোউপায় নেই, জলপথে যাওয়াও প্রায় দুঃসাধ্য ব্যাপার। রহস্যময় এ দ্বীপ সম্পর্কে যা কিছু জানা গেছে তা জানা হয়েছে কৃত্রিমউপগ্রহ ও বিমানের মাধ্যমে উপর থেকে। বোভেট দ্বীপে যে কখনো মানববসতি গড়ে উঠেছিল তেমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে ষাটের দশকের একটি পরিত্যক্ত লাইফ বোট দেখতে পাওয়া গেছে। কিন্তু দ্বীপের কোথাও লাইফ বোটব্যবহারকারী কাউকে দেখা যায়নি।
এ দ্বীপটি নিয়ে এমন কিছু কথা প্রচারিত রয়েছে যার সত্যতা পাওয়া যায়নি। যেমন বলা হয়ে থাকে যে, বোভেট দ্বীপের পাশেইআরও একটি দ্বীপ ছিল। অথচ তেমন কোনো দ্বীপ ছিল কি না তার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। দ্বীপটির আয়তন পঁচাত্তর বর্গমাইল।পুরোটা দ্বীপ বরফে ঢাকা। তাই উল্লেখযোগ্য কোনো প্রাণীও সেখানে নেই বলে মনে করা হয়। বিজ্ঞানীদের ধারণা, বোভেটদ্বীপে শুধু পেঙ্গুইন, শিল আর দুই-এক প্রজাতির সামুদ্রিক পাখির সন্ধান পাওয়া যেতে পারে।
ফুটন্ত কাদা ( নিউজিল্যান্ড):
নিউজিল্যান্ডের রোটোরোয়ায় অবস্থিত TAUPO লেকে ফুটন্ত কাদা-মাটি দেখতে পাওয়া যায়।গবেষকদের ধারনা,নদী ওলেকের পানি নির্দিষ্ট এই জায়গায় উত্তপ্ত পাথরের উপরে প্রবাহিত হয় বলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।এটি পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান হয়ে দাড়িঁয়েছে।
সানবিডি/ঢাকা/আহো