এসএওসিএলের ৪৭২ কোটি টাকা অনিয়মে কী ব্যবস্থা, জানতে চান হাইকোর্ট
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২২-১১-৩০ ২০:৪৭:৪৫
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সহযোগী প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) ৪৭২ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
বিপিসি ও বাংলাদেশ কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলকে আগামী ৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দিয়ে তা জানাতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে এসএওসিএলের ৪৭২ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে প্রয়োজনীয় নথিপত্র দিয়ে সহযোগিতা করতে বিপিসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (৩০ নভেম্বর) দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বিপিসির প্রতিবেদন দেখে এ আদেশ দেন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চ।
আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। বিপিসির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন ও আব্দুস সামাদ আজাদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
‘এ বিপিসি কনসার্ন রোবস স্টেট কফার্স অব ৪৭২.৭ ক্রো’ শিরোনামে গত ৪ নভেম্বর প্রতিবেদন প্রকাশ করে একটি ইংরেজি দৈনিক। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, বিপিসি সহযোগী প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কম্পানির (এসএওসিএল) ২১ অনিয়মের কারণে সরকার ৪৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বাংলাদেশ কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) ২০১২-১৩ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত এসএওসিএলের নথি পর্যালোচনা তথ্যের ভিত্তিতে এ কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
এ ছাড়া এসএওসিএলের নথি পর্যালোচনা তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেসব অসংগতি দেখা গেছে, এগুলোর মধ্যে রয়েছে শীর্ষ কর্মকর্তাদের দ্বারা অর্থ আত্মসাৎ, উচ্চ হার, ওভারটাইম, অনুপস্থিত তহবিল, মামলা-মোকদ্দমা ফি প্রদানে অনিয়ম ও আয়কর অধ্যাদেশ এবং ভ্যাট বিধি লঙ্ঘন। প্রতিষ্ঠানটির পাঁচ পরিচালকের একজন এবং এর ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি মঈনুদ্দিন আহমেদ এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রকাশিত এ প্রতিবেদনটি নজরে আসার পর গত ৬ নভেম্বর উচ্চ আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ আদেশ দেন। সেদিনও আদালত এসএওসিএলের ৪৭২ কোটি টাকা অনিয়মের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, তা জানতে চান।
এ ছাড়া এসএওসিএলের অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে। বিপিসি ও বাংলাদেশ কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। আর দুদককে নির্দেশ দেওয়া হয়, এসএওসিএলের পরিচালক মঈন উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে মামলার অগ্রগতি জানাতে।
আদেশ অনুযায়ী আদালতে প্রতিবেদন দেয় দুদক ও বিপিসি। দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ অনিয়মের বিষয়ে অনুসন্ধানের পর গত বছর ৯ মার্চ চট্টগ্রামের দুদক কার্যালয়ে এসএওসিএলের পরিচালক মঈন উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে সম্পদের তথ্য গোপন, অর্থ আত্মসাৎ, পাচার ও জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা হয়েছে। মামলাটি তদন্তাধীন। আর এসএওসিএলের ৪৭২ কোটি টাকা অনিয়মের বিষয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর মামলা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অচিরেই মামলা করা হবে।
আর বিপিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গণমাধ্যমে ৪৭২ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের আগেই বিপিসি ২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারি অভিযোগ তদন্তে একটি কমিটি গঠন করে। এ কমিটিকে এসএওসিএলের ২০১২-১৩ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরের আয়-ব্যয়, অডিট, বিনিয়োগসহ কম্পানিটির সার্বিক আর্থিক কর্মকাণ্ড পর্যালোচনার বিপিসির এক পরিচালককে আহ্বায়ক করে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে কাজ শুরু করার পর ওই বছরের ২৫ আগস্ট প্রতিবেদন দেয়। পরে এ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে বিভিন্ন সময় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয় হাইকোর্টে দেওয়া বিপিসির প্রতিবেদনে।
বিপিসির আইনজীবী আব্দুস সামাদ আজাদ বলেন, কমিটির প্রতিবেদনের পর বিপিসির ৩৭৯তম বোর্ড সভায় পরিচালক মঈন উদ্দিন আহমেদকে এসএওসিএলের অতিরিক্ত ক্ষমতা ও দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এএ