এ আগুন না থামালে বিচারবিভাগ পুড়ে ছাই হয়ে যাবে: হাইকোর্ট
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২৩-০১-১৭ ১৬:২২:১৫
বিচারকের সঙ্গে আইনজীবীদের অশোভন আচরণে উদ্বেগ জানিয়ে দেশের উচ্চ আদালত বলেছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনা সভ্যতার সব সীমা অতিক্রম করেছে।
মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ফারুককে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও অশালীন আচরণের ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে অপসারণ করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিটিআরসিকে দ্রুত এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে উত্তেজনা প্রশমনে অ্যার্টনি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন ফকিরকে কাজ করতে বলেছেন উচ্চ আদালত।
বিচারকের সঙ্গে আইনজীবীদের অশোভন আচরণ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে তোলপাড় বিচারবিভাগ। ১ জানুয়ারির ঘটনার পর এখনও শতভাগ স্বাভাবিক হয়নি আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতের কার্যক্রম।
সকালে হাইকোর্টে হাজির হন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সেক্রেটারিসহ তিনজন। এরপর শুরু হয় শুনানি। এসময় হাইকোর্ট বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনা সভ্যতার সব সীমা ছাড়িয়েছে, এ আগুন না থামালে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে বিচারবিভাগ।’
এদিন তিন আইনজীবী শুনানি পেছানোর আবেদন জানালে আদালত তা মঞ্জুর করে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন। ওদিনও হাজির হতে হবে তিন আইনজীবীকে।
শুনানি শেষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘আদালত ওই ভিডিও অপসারণের নির্দেশনা দিয়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে আদালত ও আইনজীবীদের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। আমরা এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সরিয়ে ফেলার নির্দেশনা প্রার্থনা করছি।’
গত ৫ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ফারুককে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও অশালীন আচরণের ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট তানভীর আহমেদ ভূঞা, সম্পাদক (প্রশাসন) অ্যাডভোকেট মো. আক্কাস আলী ও অ্যাডভোকেট জুবায়ের ইসলামকে তলব করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার দায়ে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।
বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন। এসময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
এর আগে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও অশালীন আচরণের ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিচার চেয়ে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে অভিযোগ করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ফারুক। প্রধান বিচারপতির নির্দেশে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে পাঠানো বিচারকের অভিযোগ বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠানো হয়।
হাইকোর্টে পাঠানো আবেদনে বলা হয়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ফারুকের পাঠানো পত্রে জানানো হয়েছে যে, তিনি গত ২ জানুয়ারি সকালে যথাসময়ে বিচার কার্য পরিচালনার জন্য এজলাসে বসেন। এ সময় তিনি দৈনন্দিন কাজের তালিকায় নির্ধারিত মামলা শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। এজলাস চলাকালীন বার সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. তানভীর ভূঞা, সম্পাদক প্রশাসন অ্যাডভোকেট মো. আক্কাস আলী, অ্যাডভোকেট জুবায়ের ইসলামসহ আনুমানিক ১০/১৫ জন আইনজীবী আসেন এবং তারা অশালীন ও অসৌজন্যমূলকভাবে তাকে এজলাস থেকে নেমে যাওয়ার জন্য বলেন। বারের সভাপতি আদালতকে উদ্দেশ্য করে উচ্চস্বরে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।
এসময় আদালতের এজলাসে কোর্ট ইন্সপেক্টর, আদালতের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্য, আদালতের কর্মচারী ও বিচারপ্রার্থী জনসাধারণ উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের মধ্য থেকে একজন সদস্য ঘটনাটি ভিডিও করেন। পরে ভিডিওটি তার হস্তগত হয়। তার দরখাস্তের অংশ হিসেবে ভিডিও ক্লিপটি তিনি আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করেছেন।
হাইকোর্টে পাঠানো আবেদনে বলা হয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতিসহ অন্য আইনজীবীরা এজলাস চলাকালীন অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও অশালীন আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারকদের নিরাপত্তা, বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি এবং শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে উক্ত অভিযোগের বিষয়টি নিষ্পত্তি হওয়া আবশ্যক। এজলাস চলাকালীন আদালতে বিচারক ও কর্মচারীদের অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও অশালীন আচরণের জন্য আদালত অবমাননার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদনটি ৪ জানুয়ারি হাইকোর্টে পাঠানো হয়।
এএ