চা বিক্রি করে গোল্ডেন-৫ পেয়েছে মৌসুমী
প্রকাশ: ২০১৬-০৫-১২ ১২:১৪:২৫
অভাবের সংসার। ঠিকমতো খাবারটুকুও জোটে না। বিদ্যালয়ে যাওয়া সময়টুকু ছাড়া তার সময় কাটে মায়ের চায়ের দোকানে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে সেখানেই চলে পড়ালেখা। বাড়িতে নেই বিদ্যুৎ। রাতে তাই হারিকেনের আলোয় চলে পড়ালেখা। শত কষ্ট ও এক রাশি অভাবও দমাতে পারেনি মৌসুমীকে। এসএসসি ফলাফলে সে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে।
মৌসুমী রাজশাহীর তানোর পৌর এলাকার দিনমুজর আব্দুর মান্নান ও মা নাজিরা বিবির মেয়ে। এবারে সে আকচা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছে মৌসুমী। সন্তানের এমন সাফল্যে খুশি বাবা আব্দুর মান্নান ও মা নাজিরা বিবি। মেধাবী হওয়ায় পড়ালেখায় সব সময় অনুপ্রেরণা যোগাতেন তার মা নাজিরা বিবি। এ জন্য শত প্রতিকুলতা সত্ত্বেও মৌসুমীর পড়ালেখায় ছেদ পড়েনি। ক্লাসে ভালো হওয়ায় স্কুল শিক্ষকরাও তাকে সহযোগিতা করেছেন। মৌসুমীর স্বপ্ন একজন ডাক্তার হওয়া। কিন্তু চরম দারিদ্র্য তার সেই স্বপ্ন পূরণের পথে বিশাল বাধা।
মৌসুমীর বাবা আব্দুল মান্নান জানান, রাস্তার ধারে সরকারি খাস জায়গায় একটিমাত্র টিনের কুঁড়েঘর। পরিবারের সকলে একসঙ্গে ঘুমাই। বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। হারিকেনের আলোতে মৌসুমী রাত জেগে পড়ালেখা করতো। প্রাইভেট পড়ার মতো সামর্থ ছিল না তার বলেও জানান। কিন্তু মেয়ের পড়ালেখার আগ্রহ দেখে তিনি অতি কষ্টে পড়ালেখা খরচ চালিয়ে গেছেন। তিনিও চান তার মেয়ে শহরের ভালো কলেজে পড়াশুনা করুক। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও সামর্থ নেই।
এ ব্যাপারে মেধাবী মৌসুমীর মা নাজিরা বিবি জানান, এমন দিন আসে যখন ঘরে খাবার থাকে না, না খেয়ে মেয়ে তার স্কুলে গেছে। তার স্বপ্ন মেয়েকে শহরের ভালো কলেজে পড়ানোর ইচ্ছে তাদের। কিন্তু বড় বাধা টাকা।
আকচা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসলাম উদ্দিন বলেন, ‘মৌসুমী মেধাবী এক মেয়ে। খেয়ে না খেয়ে কষ্ট করে লেখাপড়া করে সে আজ সার্থক হয়েছে।’
মৌসুমী বলেন, গরীবের ঘরে জন্ম আমার। শত কষ্টের মধ্যে দিয়ে তার বাবা-মা লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছে। প্রাইভেট পড়ার মতো সমর্থ ছিল না। মার সঙ্গে চায়ের দোকান চালিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে গেছি। বাবা-মার দোয়া, শিক্ষক ও সহপাঠীদের সহযোগিতায় আজ ভালো ফলাফল করতে পেরেছি।’
মৌসুমী আরো জানান, চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছে তার। যদি লেখাপড়া চালানো সম্ভব হয় তাহলে চিকিৎসক হয়ে গরীব মানুষের সেবা করবে। তবে তার এ স্বপ্নপূরণে প্রধান বাধা দারিদ্রতা। সে অভাবকে সঙ্গী করে কতো দুর সামনে এগুনো যাবে তা নিয়ে শঙ্কায় আছে মৌসুমী।