পাঁচ মাসেও শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করতে ব্যর্থ জাবি প্রশাসন, সেশনজটের আশঙ্কা
জাবি প্রতিনিধি প্রকাশ: ২০২৩-১১-১২ ১৩:১০:৪৪
ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পাঁচ মাস হয়ে গেলেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ২০২২-২৩ সেশনের শ্রেণি কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইতোমধ্যে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করলেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে উদাসীন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিসের শিক্ষা শাখা থেকে জানা যায়, এবছর ৯ মে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন শুরু হয় । ১৮ জুন থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া ভর্তি কার্যক্রম গত ১৬ আগস্ট শুরু হয়ে ১৮ সেপ্টেম্বর শেষ হয়। এবার বিভিন্ন বিভাগে ছাত্রদের ২০টি এবং ছাত্রীদের ১৪টি আসন খালি রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত শ্রেণি কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষ কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি।
এদিকে, এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১৬ আগস্ট, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ০৩ সেপ্টেম্বর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫ সেপ্টেম্বর এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ অক্টোবর থেকে থেকে ২০২২-২৩ সেশনের শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রেণি কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। একই অবস্থা বিগত বছরগুলোতেও পরিলক্ষিত হয়েছে। ২০২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, ১ নভেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে, ১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ২০২৩ সালের ২২ জানুয়ারি থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২১-২২ সেশনের শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হয়। অপরদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি থেকে একই সেশনের শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হয়।
গতমাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে নভেম্বরে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করার আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত তারিখ নির্ধারণ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক প্রথম বর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম পিছিয়ে পড়ছে ।
কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সচিব ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার সৈয়দ মোহাম্মদ আলী রেজা শ্রেণি কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে বলেন, এ বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নবীন শিক্ষার্থীদের গণরুমে উঠাতে চাচ্ছে না। তাই নতুন হলগুলো দ্রুত চালু করে সেখানে তাদের আসন নিশ্চিত করে ক্লাস শুরুর চেষ্টা করা হচ্ছে।
শুধু শ্রেণি কার্যক্রম নয়, ভর্তি আবেদনও শুরু হয় অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালগুলো থেকে বিলম্বে। দেরীতে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু ও ভর্তি কার্যক্রমে ধীরগতির ফলে পিছিয়ে পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। একই সেশনে পড়াশোনা করেও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের সাথে তাল মিলিয়ে শেষ করতে পারছেনা বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। যার প্রভাব পড়ছে প্রতিযোগিতামূলক চাকরি পরীক্ষায়। প্রায়ই সুযোগ হারাতে হচ্ছে প্রতিযোগিতামূলক চাকরি পরীক্ষাগুলোয় অংশগ্রহণ থেকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী তানজিম আহমেদ বলেন, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের ক্যাম্পাসে দেরিতে ক্লাস শুরু হওয়ার প্রভাব শুরুর দিকে বোঝা না গেলেও তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষে গিয়ে বোঝা যায়। অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়া আমাদের সমবয়সী বন্ধুদের তুলনায় আমরা অনেক পিছিয়ে পড়েছি।
কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সচিব ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার সৈয়দ মোহাম্মদ আলী রেজা বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কারণে এক সেশনের শিক্ষার্থীদের বের হওয়া সাপেক্ষে নতুন শিক্ষার্থীদের ভর্তির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এছাড়া বিভিন্ন সময় বারবার ভর্তি বাতিল, হলে আসন ফাঁকা না থাকাসহ নানা জটিলতার কারণে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হওয়া ভর্তি কার্যক্রমে পিছিয়ে পড়ার অন্যতম একটি কারণ।
ভর্তি কার্যক্রমে গতি ফিরিয়ে আনতে ও সেশনজট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কি ভাবছে তা জানতে উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
এম জি