উচ্চশিক্ষিত দুই সন্তানের নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে আদালতে মায়ের মামলা
আপডেট: ২০২৪-০২-১৫ ১৮:৪৩:৩৫
মেয়ে সরকারি কর্মকর্তা আর ছেলে একটি বেসরকারি কোম্পানির ব্যবস্থাপক। গর্ভজাত এই দুই সন্তানের নির্মম নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচাতে আদালতে মামলা করেছেন ৭২ বছর বয়সের বৃদ্ধা মা খুশিদা আক্তার।
বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তরিকুল ইসলামের মায়ের জবানবন্দি গ্রহণ শেষে বড় সন্তান হামিদুল হক সোহেল, মেয়ে তাসলিমা আক্তার সুমি ও তার জামাতা সেলিম রেজার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। সমাজের উচ্চশিক্ষিত পরিবারে মায়ের প্রতি সন্তানদের এমন আচরণে উষ্মা প্রকাশ করেন আদালত।
বিধবা খুরশিদা আক্তারের এক ছেলে ও দুই মেয়ে উচ্চশিক্ষিত ও সমাজে প্রতিষ্ঠিত। তা সত্ত্বেও মায়ের শেষ সম্বলটুকু লিখে নিতে নানা সময়ে চাপ দেন বড় ছেলে সোহেল ও মেয়ে সুমি, এমন অভিযোগ ভুক্তোভোগীর।
প্রতিনিয়ত নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে গেলে একবার থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেছিলেন তাদের বিরুদ্ধে। এরপর শরীরে হাত উঠলে সন্তানদের নির্যাতন সইতে না পেরে আদালতের দারস্থ হন এই মা।
ভুক্তভোগী মা খুরশিদা আক্তার বলেন, ‘কপাল চাপড়ে বলেন, আমার কপাল খারাপ রে বাবা। আমার কাপল খারাপ। তিনি বলেন, আমি হালাল টাকা দিয়ে বাড়ি করেছি। কোনো হারাম টাকা দিয়ে বাড়ি করিনি।’
আদালত বাদীর জবানবন্দি নিয়ে অভিযুক্ত ওই দুই সন্তানসহ জামাতা সেলিম রেজার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন বলে জানান ভিকটিমের আইনজীবী।
ভুক্তভোগির আইনজীবী জসিম উদ্দিন বলেন, আসলে বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। ১৯৮৩ সালে যে সম্পদ ক্রয় করেছেন সেখান থেকে তার দ্বিতীয় সন্তানকে তিনি একটি ফ্ল্যাট লিখেও দিয়েছেন। কিন্তু সন্তানরা দেখাশুনা না করায় তিনি ওই জমি একটি অংশ বিক্রি করে দেন তার চিকিৎসার জন্য। তবে জমি বিক্রির টাকা জন্য সন্তানরা তারওপর ক্রমাগত চাপ দিতে থাকে। এছাড়া বাকি সম্পদ ওই সন্তানদের লিখে দেওয়ার জন্য ভুক্তভোগীর ওপর চাপ দিতে থাকে।
আইনজীবী আরও জানান, ‘অসুস্থ্য ৭২ বছরের একজন মাকে আদালতে দেখে বিচারক নিজেই তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। এবং তার সমস্যার কথাগুলো অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শুনেন। একপর্যায়ে আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।’
মামলার এজহারে জানা যায়, রাজধানীর কাফরুল থানার উত্তর ইব্রাহিমপুরের প্রয়াত ওসি হাফিজুর রহমানের এক ছেলে, দুই মেয়েসহ তাদের পরিবার নিয়ে একই বাড়িতে বসবাস করেন খুরশিদা আক্তার। ভরণপোষণের টাকা জোগার করতে প্রায় সাড়ে তিন মাস আগে নিজ সম্পতি বিক্রি করেন তিনি। সেই টাকার ভাগ সহ বাকি সম্পত্তি লিখে দিতে বৃদ্ধি মায়ের ওপর নানা সময় বল প্রয়োগ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মেয়ে তাসলিমা সুমি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও ছেলে হামিদুল হক সোহেল বেসরকারি একটি কোম্পানির ব্যাবস্থাপক পদে চাকরি করেন।
এএ