হাসিনা সরকারের পতনের পর ফের চাঙ্গা রেমিট্যান্স প্রবাহ
সানবিডি২৪ প্রতিবেদক আপডেট: ২০২৪-০৮-১২ ১৮:৩০:০৯
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকার ৫ আগস্ট পদত্যাগ করেন। আন্দোলনে মধ্যে স্থবির হয়ে পড়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ। চলতি মাসের ১ থেকে ৩ তারিখ পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছিলো ৯ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। পরের তিন দিনে অর্থাৎ ৩ থেকে ৬ তারিখ পর্যন্ত এসেছে আরও ১০ লাখ ডলার। সব মিলিয়ে সরকার পতন পর্যন্ত দেশে বৈদেশিক মূদ্রা এসেছিলো ৯ কোটি ৬৬ লাখ ডলার।
অপরদিকে, সরকার পতনের পর স্থবির হয়ে পড়া রেমিট্যান্স প্রবাহ ফের চাঙ্গা হয়ে ওঠতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৪ থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত এসছে ৩৮ কোটি ৭১ লাখ ডলার। সবমিলিয়ে চলতি মাসের ১ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত বৈদেশিক মূদ্রা এসেছে ৪৮ কোটি ২৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার।
খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, গত মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলন, ইন্টারনেট ও সংঘাতের কারণে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স শাটডাউন ঘোষণা দেন। এর প্রভাবে ওই মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে। তার ধারাবাহিকতা চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেও ছিল। তবে সরকার পতনের পর রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। কারণ নতুন সরকারকে সবাই ভরসা করছে। গত মাসে দেশে প্রবাসী আয় আসা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। জুলাই মাসে যে আয় এসেছে, তা গত ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। জুলাই মাসে প্রবাসী আয় এসেছে প্রায় ১৯১ কোটি মার্কিন ডলার। এর আগে সবশেষ গত বছরের সেপ্টেম্বরে সর্বনিম্ন ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ ডলার প্রবাসী আয় এসেছিল।
সূত্র জানায়, শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর দেশে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে। বিভিন্ন দেশের এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোতে বেড়েছে প্রবাসীদের ভিড়।
তথ্য অনুযায়ী, ১ থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ৩৭ কোটি ডলার। ৭ থেকে ১৩ জুলাই এসেছে ৬০ কোটি ৮১ লাখ ডলার। ১৪ থেকে ২০ জুলাই এসেছে ৪৫ কোটি ডলার। ২১ থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত এসেছে ১৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার। ২৮ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত এসেছে ৩৪ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯০ কোটি ৯০ লাখ ডলার। সে হিসাবে জুনের চেয়ে জুলাইয়ে রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি কমেছে ২৫ দশমিক ১৯ শতাংশ। এর আগে গত জুনে ২৫৪ কোটি ডলার আয় দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। জুনে দেশে যে পরিমাণ প্রবাসী আয় এসেছিল, তা ছিল গত তিন বছরের মধ্যে একক কোনো মাসে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয়। এর আগে সর্বশেষ ২০২০ সালের জুলাইয়ে ২৫৯ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শেখ হাসিনার পতনের পর বর্তমানে দেশে হুন্ডি একেবারে বন্ধ রয়েছে। টাকা পাচার, আন্ডার বা ওভার ইনভয়েসিংয়ের মতো কারসাজিমূলক বিষয়গুলো বন্ধ থাকায় বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে।
সূত্র আরও বলছে, অন্তর্বর্তী সরকার যতদিন থাকবে, ততদিন হুন্ডি কম থাকবে। যেমনটি হয়েছিল কোভিডের সময়ে।
এর আগে, গেল জুলাই মাসে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও কোরবানি পরবর্তী মাস হওয়ায় প্রবাসী আয় আসা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে যায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিপোর্টে দেখা যায়, জুলাই মাসে প্রবাসী আয় এসেছে প্রায় ১.৯১ বিলিয়ন ডলার। যদিও তার আগের মাস জুনে এসেছিল ২.৫ বিলিয়ন ডলার।
বেসরকারি একটি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধান গণমাধ্যমকে বলেন, রোববারে কিছুটা কম পেলেও গতকাল সোমবারে বিদেশি এক্সচেঞ্জহাউজগুলো ভালো পরিমাণের রেমিট্যান্স পাচ্ছে। প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণের এমন ধারা অব্যাহত রাখলে ডলার সংকট কেটে যাবে।
ইসলামী ধারার একটি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধান বলেন, দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্যের এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো থেকে আজ সোমবার ভালো পরিমাণে রেমিট্যান্স আসছে।
এএ