এবার ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিতে গভর্নরকে শেয়ারহোল্ডার-গ্রাহকদের চিঠি
আপডেট: ২০২৪-০৮-১৮ ১৯:১৯:৪৬
ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে চিঠি দিয়েছেন ব্যাংকটির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) শেয়ারহোল্ডারসহ গ্রাহকরা। চিঠিতে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন প্রস্তাব দিয়েছেন তারা।
রোববার (১৮ আগস্ট) তাঁরা বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে এই পৃথক চিঠি জমা দেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, পরিচালনা পর্ষদ ও কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে ব্যাংকের তহবিল লুটপাটের যে তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, বাস্তব অবস্থা এর চেয়েও জঘন্য। দীর্ঘদিন লুটপাটের ধারা অব্যাহত থাকার কারণে ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ব্যাংকটির প্রতি গণমানুষের আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে। এ জন্য তাঁরা দ্রুত পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের দাবি জানান।
এক চিঠিতে ৮১ গ্রাহকের পক্ষ হয়ে সৈয়দ মেজবাহ উদ্দীন উল্লেখ্য করেন, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি দেশের সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক ব্যাংক। আড়াই কোটি গ্রাহকের এ ব্যাংকের বোর্ড অব ডাইরেক্টরস ও কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার কূটকৌশলে ব্যাংকের তহবিল পাচার এবং লুটপাটের ভয়ঙ্কর চিত্র বিভিন্ন সময় অসংখ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এ সম্পর্কে আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন। আমাদের বিশ্বাস, লুটপাটের বাস্তব চিত্র গণমাধ্যমে প্রকাশিত অবস্থার চেয়েও ভয়াবহ। দীর্ঘদিন এই অনিয়ম ও লুটপাটের ধারা অব্যাহত থাকার কারণে ব্যাংকটির প্রতি আমানতকারীসহ গণমানুষের নিকট এ ব্যাংকের ইমেজ সংকট দেখা দিয়েছে।
প্রকৃত অর্থে, এ ব্যাংকটি দীর্ঘদিন যাবৎ আপামর জনগণের আস্থার কেন্দ্র বিন্দু হিসেবে সেবা দিয়ে আসছিল। তাই, ইসলামী ব্যাংকের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার, ব্যাংকের সকল শেয়ারহোল্ডার তথা স্টেকহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষা, তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম পুনরায় চালু করার পাশাপাশি দেশের শক্তিশালী অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যাংক কোম্পানি আইন ৪৭ ধারা মোতাবেক ব্যাংকের বর্তমান দুর্নীতিগ্রস্ত পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া জরুরি। জাতীয় স্বার্থেই যোগ্য, সৎ ও দুর্নীতিমুক্ত ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে অথবা সাবেক পরিচালকদের মধ্য হতে কতিপয় ব্যক্তিকে নিয়ে বোর্ড পুনর্গঠনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে আপনি দ্রুত পদক্ষেপ নিবেন বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে আপনার দ্রুত পদক্ষেপের জন্য জাতি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
অপর এক চিঠিতে ইসলামী ব্যাংকের আইপিওর শেয়ারহোল্ডার ড. এম কামাল উদ্দীন জসীম উল্লেখ্য করেন, আপনি (গভর্নর) ইতোমধ্যে বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। ব্যাংকটির বোর্ড অব ডাইরেক্টরস ও কতিপয় অসৎ কর্মকর্তার সহায়তায় ব্যাংকের বিপুল অর্থপাচার ও লোপাটের ভয়ঙ্কর চিত্র বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। আমি মনে করি, বাস্তব অবস্থা এর চেয়েও জঘন্য। দীর্ঘদিন এই অনিয়ম ও লুটপাটের ধারা অব্যাহত থাকায় ব্যাংকটির প্রতি আমানতকারীদের/গণমানুষের এবং শেয়ারহোল্ডাদেরও আস্থায় ফাটল ধরেছে। অথচ ইতোপূর্বে, এ ব্যাংক বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক The Strongest Bank in Bangladesh হিসেবে স্বীকৃত ছিলো। প্রতি বছর প্রায় ডজন খানেক আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হতো এ ব্যাংক। তাছাড়া বাংলাদেশের এক মাত্র ব্যাংক, যা একাধারে বিগত ১২ বছর যাবৎ যুক্তরাজ্য ভিত্তিক বিশ্ববিখ্যাত ম্যাগাজিন ‘দি ব্যাংকার’ কর্তৃক বিশ্বসেরা এক হাজার ব্যাংকের তালিকায় স্থান লাভ করে আসছিল।
অতএব আপনার নিকট আবেদন, ইসলামী ব্যাংকের হৃত গৌরব পুনরুদ্ধার, ব্যাংকের সকল শেয়ার হোল্ডার তথা স্টেকহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষা, তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম পুনরায় চালু করার জন্য ব্যাংক কোম্পানি আইন ৪৭ ধারা মোতাবেক ব্যাংকের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে দেশের আপামর জনগণের নিকট আস্থাভাজন এমন দক্ষ, সৎ ও দুর্নীতিমুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে বোর্ড গঠন জরুরি। তাছাড়া সাবেক পরিচালকদের মধ্য হতে কিছু সংখ্যক ব্যক্তির সমন্বয়েও বোর্ড পুনর্গঠন করা যেতে পারে। সুতরাং, আপামর জনগণের স্বার্থে অতিসত্বর এ ব্যাংকটি রক্ষার লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে আপনার প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ রইলো।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) এস আলম গ্রুপের হাত থেকে ইসলামী ব্যাংককে রক্ষা করতে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে চিঠি দিয়েছিল সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
গভর্নরকে পাঠানো ওই চিঠিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে সই করেছেন ইসলামী ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট এএসএম রেজাউল করিম। এতে ব্যাংকটির কয়েকশ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্মতি রয়েছে।
এএ