পর্ষদ ভাঙতে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি
‘এসআইবিএলের ‘৩৫ হাজার কোটি টাকা’ এস আলমের পকেটে’
আপডেট: ২০২৪-০৮-১৮ ১৯:৪৭:৪৫
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের পর এবার সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ব্যাংকের কয়েকজন উদ্যোক্তা ও শেয়ারধারী। তাদের অভিযোগ ২০১৭ সালে একটি গোয়েন্দা সংস্থা অস্ত্রের মুখে ব্যাংকের তৎকালীন নেতৃত্বকে পদত্যাগে বাধ্য করে। ব্যাংকটিতে এস আলম গ্রুপের বিরতণকৃত ঋণ ছিল প্রায় ৩৫ হাজার কোটিতে দাড়িয়েছে। বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ শুধু টাকা পাচার, ব্যাংক লুটপাট ও তাদের নির্দিষ্ট অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে ব্যাংকটি দখল করেছে।
গতকাল রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দিয়েছে ব্যাংকটির উদ্যোক্তা ও শেয়ারধারীরা। তাদের চিঠিতে বলা হয়েছে, ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৫ইং সালে। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে অত্যন্ত সাফল্যের সাথে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। মাত্র ২২ বছরে ব্যাংকটি অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য ২০১৭ সালে ব্যাংকের উপর শকুনের থাবা বিস্তৃত হতে থাকে। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের নিয়মিত ৪০৪তম সভা ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর নির্ধারিত ছিল ব্যাংকের মতিঝিলস্থ প্রধান কার্যালয়ের বোর্ড রুমে। সেদিন বিগত তৎকালীন সরকারের একটি বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে এস আলম এবং তাদের সহযোগীরা ঐ সময়ে বিদ্যমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান, নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কোম্পানী সচিবকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে উক্ত বাহিনীর কার্যালয়ে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে।
শেয়ারধারীদের অভিযোগ, বিগত সরকারের ছত্রছায়ায় এস আলম গ্রুপ তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যাংকের শেয়ার বেআইনিভাবে অর্থাৎ ব্যাংক কোম্পানী আইনের ১৪ (ক) ধারা সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘণ করে কেন্দ্রীভূত করে ব্যাংকের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে যা ব্যাংকের বর্তমান শেয়ার হোল্ডিং পর্যালোচনা করলে স্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হবে। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এক সময় গ্রাহকের আস্থাভাজন এবং আইনের সুশাসন দ্বারা পরিচালিত ব্যাংক হিসাবে গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীদের নিকট আস্থার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত ছিল। পরবর্তীতে এস আলম গ্রুপের সীমাহীন দুর্নীতি ও নামে-বেনামে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ প্রদানের দরুণ ব্যাংকটি আজ অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। এছাড়াও বর্তমানে উক্ত ব্যাংকের শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ প্রায় ৯,০০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেলেও বিশেষ কায়দায় এখনও ব্যাংকের টাকা এস আলম ও তার বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের নামে ও বেনামে উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে যা দ্রুত বন্ধ করা দরকার। অন্যথায় গ্রাহকের টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিবে।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে এস আলম গং কর্তৃক দখলের সময় ব্যাংকটির বিরতণকৃত ঋণ ছিল প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা, যা বর্তমানে প্রায় ৩৫ হাজার কোটিতে দাড়িয়েছে। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানায় নতুন ১৫ হাজার কোটি টাকার সিংহভাগ নামে বেনামে এস আলম গং তুলে নিয়েছে। এস আলম গ্রুপের সীমাহীন দুর্নীতির ফলে ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। ফলে বর্তমানে গ্রাহক পর্যায়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। গ্রাহকদের সন্দেহ, যদি ব্যাংক এস আলম মুক্ত না হয় তাহলে তাদের আমানত ফেরত পাবেনা। তাই এখন প্রায় সকল শাখার গ্রাহকগণ ব্যাপক হারে তাদের আমানত তুলে নিচ্ছে। আপনার সদয় অবগতির জন্য সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে এসআইবিএল-এর মালিকানা পরিবর্তন ও বর্তমান সময়ে ব্যাংকের সার্বিক আর্থিক অবস্থা সম্পর্কিত বিষয়ে প্রকাশিত সংবাদের কিছু কপি সংযুক্ত করা হলো।
উদ্যোক্তারা বলছেন, সাধারণ শেয়ার হোল্ডারদের বিনিয়োগ সুরক্ষাসহ সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এর স্থিতিশীলতা আনয়ন ও আইনের সুশাসন এবং ব্যাংকিং সেক্টরে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য আলোচ্য বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দিয়ে উদ্যোক্তা ও প্রকৃত শেয়ার হোল্ডারদের সমন্বয়ে একটি কার্যকর পরিচালনা পর্ষদ গঠনের আবেদন জানাই। একইসাথে এস আলমের আজ্ঞাবহ বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সকল দুর্নীতি, অনিয়ম ও বেনামী ঋণ প্রদান থেকে বিরত রাখার জন্য তাদের দ্রুত অপসারণের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের অগনিত গ্রাহক ও আমানতকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।
এএ