জনতা ব্যাংকের এস আলম প্রেম!
জাহাঙ্গীর আলম আনসারী প্রকাশ: ২০২৪-০৮-১৯ ০৯:০৮:৪৯
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের একে একে বেড়েয়ে আসছে এস আলমের গ্রুপের ব্যাংক কেলেঙ্কারির তথ্য। আওয়ামী লীগ সরকারের যোগসাজশে নিয়েন্ত্রনে নেওয়া বেসরকারী খাতের ৭টি ব্যাংক থেকে ঋণের নামে হাতিয়ে নিয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। গ্রুপটির হাত থেকে বাদ যায়নি সরকারি ব্যাংকও।
রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের বিতরণকৃত মোট ঋণের ১০ শতাংশের বেশি এস আলম গ্রুপের পকেটে। রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাংকটির সাধারণ বীমা ভবন চট্টগ্রাম কর্পোরেট শাখার বিতরণকৃত ঋণের ৯০ শতাংশই পকেটে পুরেছে গ্রুপটি।
চট্টগ্রামভিত্তিক এই শীর্ষ ব্যবসায়ী গ্রুপটি শুধু তাদের নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকগুলো থেকেই ঋণ নেয়নি। নিয়ম ভেঙে অন্যান্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। আর এসব কাজে পেছন থেকে সার্বিক সহযোগিতা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, জনতার সাধারণ বীমা ভবন চট্টগ্রাম করপোরেট শাখা থেকে এস আলম গ্রুপকে ৮ হাজার ২১৬ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, সেই শাখার একক ঋণগ্রহীতার হিসাবে এটি ১৬৭ শতাংশ বেশি। এছাড়াও জনতা ব্যাংকের কাছ থেকে এস আলম গ্রুপ আরও ২ হাজার ২৩৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে। এস আলম গ্রুপে জনতার মোট ঋণ ১০ হাজার ৪৪৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
এটি ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধনের ৪৫১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। আইন অনুসারে, কোনো ব্যাংক পরিশোধিত মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি একক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিতে পারে না। গত জুনের শেষে জনতার পরিশোধিত মূলধন ছিল ২ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা।
জানা গেছে, আট ব্যাংকের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান এস আলমের ঋণ জুন শেষে জনতা ব্যাংকের মোট ৯৮ হাজার কোটি টাকা ঋণের ১০ দশমিক সাত শতাংশ। আর রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাংকটির ঋণের প্রায় ৪৯ শতাংশ খেলাপি। এটি ব্যাংকটিকে আর্থিকভাবে চরম ঝুঁকিতে ফেলেছে।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে গত ২৫ জুন এস আলম গ্রুপের ছয় প্রতিষ্ঠানের নেওয়া ১ হাজার ৮৪৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ম না মেনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ অনুমতিতে চার বছরের জন্য পুনঃতফসিল করেছে ব্যাংকটি। এর মধ্যে এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ এক হাজার ৩৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, এস আলম ট্রেডিং কোম্পানি এক হাজার ১৮৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, এস আলম ভেজিটেবল অয়েল ৬৯৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা, গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন ২২১ কোটি ১৩ লাখ টাকা ও এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস এক হাজার ২২৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা নিয়েছে।
অপরদিকে, এস আলম গ্রুপের ৮ হাজার ৮৯৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা বকেয়া থাকলেও প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনঃতফসিল সুবিধা দেওয়া হয়।
ব্যাংকিং নিয়ম অনুসারে, কোনো গ্রাহকের ঋণ অনুমোদিত পরিমাণের মধ্যে থাকলেই নতুন করে ঋণ পুনঃতফসিলের সুবিধা দেওয়া যেতে পারে। এস আলম গ্রুপের ক্ষেত্রে তা হয়নি। এর পুনঃতফসিল করা ঋণ ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা সীমা ছাড়িয়ে চার হাজার ৩৭২ কোটি ২৮ লাখ টাকা হয়েছে। তারপরও গত ২৮ জুলাই ঋণ পুনঃতফসিলের অনাপত্তিপত্র দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তবে অনাপত্তিপত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শর্ত দিয়েছে। এর মধ্যে আছে ঋণের পরিমাণ আর বাড়ানো যাবে না এবং ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ঋণের পরিমাণ অনুমোদিত পরিমাণের মধ্যে আনতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. আব্দুল জাব্বারের মোবাইল নম্বরে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এম জি