চ্যাট গ্রুপে কৌতুকের নোংরামি
প্রকাশ: ২০১৭-০৩-০১ ১১:৪৯:৫৮
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রুপ চ্যাটিং এখন ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। ফেসবুক মেসেঞ্জার, হোয়াসট অ্যাপের মতো সোশ্যাল অ্যাপগুলোতে এখন গ্রুপের ছড়াছড়ি। ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারের মতো বিভিন্ন পেশাগত গ্রুপের পাশাপাশি আছে তরুণদের গ্রুপ, আছে মধ্যবয়সীদের, আছে বৃদ্ধদের গ্রুপও। গ্রুপভেদে আলোচনাও হয় ভিন্ন। সংসার-অফিস-ছেলেমেয়ে-ছোটবেলার গল্প এমন নানা বিষয় উঠে আসে গ্রুপের আলোচনায়। অনেকে বেডরুমের অনেক বিষয়ও গ্রুপে শেয়ার করে হাসিতে লুটিয়ে পড়েন। আবার সবাই যে বিষয়গুলো পছন্দ করেন তা যেমন ঠিক নয়, তেমনি অনেকে এগুলো শেয়ার না করলেও অন্যেরটা পড়তে বা জানতে আনন্দ পান। যাই হোক, অধিকাংশ গ্রুপ চ্যাটিংয়ে একটা কমন টপিক (বিষয়) থাকে যৌনতা। অর্থাৎ, বিভিন্ন অ্যাডাল্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা। কেউ হয়তো অ্যাডাল্ট কৌতুক দিচ্ছেন, কেউ জানাচ্ছেন নিজের অ্যাডাল্ট অভিজ্ঞতা। কেউ বা শেয়ার করছেন পাশের কলিগ বা ভাড়াটিয়ার কোন একান্ত গোপন কথা। আর গ্রুপ যত পুরনো হয়, সদস্যদের মধ্যে জানাশোনা বেশি হয়, অ্যাডাল্ট আলোচনা ততোই বেশি হয়।
এমনই একটি গ্রুপ আড্ডা নিয়ে বিবিসি বাংলায় লিখেছেন কলকাতার সাংবাদিক দেবশ্রুতি রায়চৌধুরী। তিনি লিখেছেন-
”আমাদের স্কুলের বন্ধুদের একটা হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ হয়েছে ইদানীং। সংসার-অফিস-ছেলেমেয়ে-ছোটবেলার গল্পে দিনে হাজার দুয়েক মেসেজে ভরপুর আড্ডা হয় আমাদের। সারাক্ষণ পিড়িং পিড়িং আওয়াজে কাজের মাঝে যাতে অসুবিধে না হয় তাই গ্রুপটাকে সাইলেন্ট করে রাখি আর দিনের শেষে চায়ের কাপ হাতে বসে পড়ে ফেলি ওদের পাগলামো। বেশ লাগে, ছোটবেলাকে এত সহজে ফিরে পেলে বেশ লাগারই কথা। চ্যাট ব্যাপারটা এমনিতে আমার খুব একটা পোষায় না, কিন্তু ছোটবেলার বন্ধুদের সংগে গল্পের এই মাধুর্য আমায় যে ভাবে আচ্ছন্ন করে রেখেছে, তাতে বেশ বুঝতে পারছি বয়স হচ্ছে!
তা সে দিন এক বান্ধবী একটা জোক পাঠাল আমাদের এই গ্রুপে। একটু অ্যাডাল্ট গন্ধ, কিন্তু ভারী মজার। সবাই হেসে খুন। আর সেই শুরু হল অ্যাডাল্ট জোকের পালা। পরপর আসতেই থাকল। পাঠাতেই থাকল গ্রুপের ৩৭ জন মেম্বারের প্রায় সক্কলে। আমি সাধারণত খুব একটা কিছু লিখি না গ্রুপে, জন্মদিনের শুভেচ্ছা, বিবাহ বার্ষিকীর ছবি দেখে স্মাইলি — আমার দৌঁড় ওই পর্যন্তই। কিন্তু অ্যাডাল্ট জোকের এই জোয়ার আমায় বাধ্য করল খোলস ছেড়ে বেরোতে।
— তোদের ব্যাপার কী বল তো! এত অ্যাডাল্ট কনটেন্ট পাস কোথা থেকে?
— কেন বর পাঠায়! ওদের অফিসের গ্রুপে, বন্ধুদের গ্রুপে এই তো চলে সারাদিন। তোর তো সে গুড়ে বালি!
— বুঝলাম, আর তোরা সেগুলো এখানে চালান করিস। কিন্তু বর ছাড়া অন্য কোনও সোর্স নেই বলতে চাস?
— আছে তো! পরিচিত, অল্প পরিচিত গাদা খানেক পুরুষ, এই জোক-এর অক্লান্ত সরবরাহকারীর তালিকা লম্বাআআ– এটা লিখে খান দশেক ডট আর দাঁত বার করা হাসির স্মাইলি পাঠায় জাঁদরেল সরকারি অফিসার সেই বান্ধবী।
–তোরা রিপ্লাই করিস বা বুঝতে দিস যে তোরা পড়েছিস জোকগুলো?
— না রে। করলেই মাথায় ওঠে। আগে স্মাইলি পাঠাতাম মাঝেমধ্যে, তাতে এমন বাড়াবাড়ি শুরু করে দিল কয়েকজন যে আজকাল একদম চেপে যাই।
— আরে আমি তো ঝামেলা এড়াতে ডবল ব্লু টিক অপশনই তুলে দিয়েছি আমার সেটিং-এ, মেসেজ পড়লাম কি পড়লাম না বোঝার সাধ্যি নেই যার ফলে!
— কয়েকটা জোক পড়তে বেশ লাগে রে, কিন্তু সেটা মুখ ফুটে বললেই এমন নোংরা রিঅ্যাকশন হয়!
কলেজ অধ্যাপিকা এক বান্ধবী লেখে পুরুষ সহকর্মীর পাঠানো অ্যাডাল্ট জোক বেশ মজার ছিল জানানোয় তিনি স্টাফরুম-এ ওর পাশে দাঁড়িয়ে হিসহিসে গলায় জানিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর কাছে দারুণ ভাল কিছু অ্যাডাল্ট ভিডিও-ও আছে।
— আমার বরের ছোটবেলার বন্ধু, আমাদের পারিবারিক বন্ধু বলতে পারিস। সে যখন এই জোক পাঠানো শুরু করল প্রথম প্রথম ভদ্রতার খাতিরে স্মাইলি পাঠাতাম — তারপরে দেখলাম অ্যাডাল্ট উপাদান ক্রমশ বাড়াবাড়ি রকমের বাড়ছে, বেড়েই যাচ্ছে। বরকে জানানোয় সে বিরক্ত হয়ে বলল, আহ্লাদ দিলে তো বাড়াবাড়ি করবেই। উত্তরটা শুনেই লোকটাকে ব্লক করে দিলাম। সেটা লোকটা বুঝতে পারল, সম্ভবত আমার বরও।
— প্রাণের বন্ধুকে এ রকম অপমান করলি, তোর বর চোটপাট করেনি?
— না রে! এ সব ব্যাপারে খুব সেয়ানা। ওর একটাই শর্ত, ওকে যেন কোনও ঝামেলা ফেস করতে না হয়। আমায় শুধু জিজ্ঞেস করেছিল তপু মানে ওর সেই বন্ধু আর মেসেজ করে কি না। আমি বলেছি, না। ব্যাস, ওই পর্বের ওখানেই ইতি।
— লোকটা তোদের বাড়ি আসে এখনও?
— হ্যাঁ হ্যাঁ, রীতিমতো বউ-বাচ্চা নিয়ে আসে, আমিও একদম নর্মাল থাকি, কী লাভ বল নোংরা ঘেঁটে!
— আমাকে তো ছেলেরা এই জাতীয় জোক পাঠালেই ব্লক করে দিই।
— জোকগুলো পড়িসও না?
— হা হা, গুড কোয়েশ্চেন। পড়ি। পড়েই ব্লক। ইডিয়টগুলোকে ট্যাকল করার পরিশ্রমটা বাজে সময় নষ্ট মনে হয় রে!
–তোরা তার মানে ওদের পাল্টা কোনও অ্যাডাল্ট জোক পাঠাস না, বা বলা ভাল পাঠাতে পারিস না?
— খেপেছিস!
— স্কুলের বন্ধুদের সংগে আবার যোগাযোগ হওয়ায় এতদিনের স্টক ক্লিয়ার করার সুযোগ হল, বুঝলি?একটা জিভ ভ্যাংচানো স্মাইলি আর এক বান্ধবীর কাছ থেকে।
পরীক্ষামূলক ভাবে আমি আমার লিস্টের কয়েকজন পুরুষ (বন্ধু, ঘনিষ্ঠ এবং পরিচিত মিলিয়ে)- কে কয়েকটা জোকস ফরওয়ার্ড করলাম। প্রতিক্রিয়া এই রকম–
কলেজের বন্ধু- ব্যাপার কী তোর! হঠাৎ এ সব কী নোংরামো শুরু করেছিস!
কর্মসূত্রে ঘনিষ্ঠ — ফাটিয়ে দিয়েছ তো! এত দিনে তা হলে মুক্তমনা হলে।
কর্মসূত্রে পরিচিত — একটা চোখমারা স্মাইলি। সঙ্গে খান তিনেক পড়ার অযোগ্য নোংরা জোক। আমি সেগুলো পুরোটা না পড়েই স্কুলের গ্রুপে ফরওয়ার্ড করে দিলাম। সংগে লিখলাম — আমার কনট্রিবিউশন।
ওরা সেগুলো পড়ে প্রবল হাসল, লিখল-করেছিস কী!তুই তো সেরা দেখছি।
বুঝলাম এই একটা জায়গায় অন্তত আমার চরিত্র বিশ্লেষণে খাপ পঞ্চায়েত ডাকা হচ্ছে না!
ফোনটা সাইলেন্ট করে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে গেলাম। ”