পিসার সেই হেলে পড়া ভবনের রহস্য!
প্রকাশ: ২০১৭-০৩-১৩ ১০:৫৫:৪৬
বিজ্ঞানী গ্যালিলিওর বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার জন্য বিখ্যাত ইতালির পিসার হেলানো মিনার থেকে শুরু করে যুক্তরাজ্যের বিগ বেন টাওয়ার- পৃথিবী জুড়ে বিখ্যাত সব ঐতিহাসিক হেলানো টাওয়ার রয়েছে। তবে শুধু ঐতিহাসিক এসব ভবনই নয়, আধুনিক যুগেও অনেক ভবন হেলে পড়ার নজির রয়েছে।
৪৫ ডিগ্রি হেলে থাকা কানাডায় অবস্থিত ৫৪১ ফুট উচ্চতার ‘মন্ট্রিয়ল টাওয়ার’ সবচেয়ে উঁচু হেলানো ভবন। যদিও অনেক ভবন ইচ্ছা করে ‘হেলানো’ ডিজাইন করা হয়, কিন্তু কখনো ডিজাইনের ভুলের কারণেও ভবন হেলে পড়ে যা প্রোপার্টি ডেভেলপার ব্যবসায়ীদের জন্য দুঃস্বপ্নের সমতুল্য। ঐতিহাসিক পিসার হেলানো মিনার ও বিগ বেন টাওয়ারকে স্থিতিশীল করার সূত্র আবিষ্কার করা লন্ডন ইম্পেরিয়াল কলেজের ইমেরিটাস প্রফেসর জন বারল্যান্ড বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, যদি কোনো ভবনের বাসিন্দারা জানে যে তাদের ভবন হেলে পড়ছে অবশ্যই তারা বিষয়টা নিয়ে খুশি হবে না। তবে তিনি মনে করেন, বেশিরভাগ হেলে পড়া বা কাত হয়ে যাওয়া ভবন বিপদজনক নয়।সম্প্রতি বিবিসি এর এক প্রতিবেদনে এমন কথাই বলা হয়েছে।
কী কারণে একটি ভবন হেলে পড়ে এবং কি পদ্ধতিতে এর সমাধান সম্ভব সেটার জন্য ভূগোল ও প্রকৌশল বিদ্যার সম্মিলনে জিওটেকনিক্স নামে আলাদা শিক্ষায়তনই গড়ে ওঠেছে। বারল্যান্ড বলেন, বিশ্লেষণে এখন আমরা অনেক উন্নতি করেছি। কিন্তু আমাদের প্রকৃতি মাতা কিভাবে কাজ করে সেটা ভালো ভাবে বুঝতে হবে। ভূমি বিশ্লেষণে যদি আপনি যথার্থ সময়-অর্থ ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান-দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন লোক নিয়োগ না করেন তাহলে বড় সমস্যায় পড়তে পারেন।
যে কারণে একটি ভবন হেলে পড়তে পারে সেগুলো ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রফেসর বারল্যান্ড বলেন, ভূমি বিশ্লেষণে হয়তো এমন কোনো দুর্বল জায়গা ছিল যা চোখে পড়েনি। অথবা অপ্রত্যাশিত কোনো ভূমিচ্যুতি বা ভূমি বিশ্লেষণের কাজটি গভীরভাবে করা হয়নি। ডিজাইনের ভুলের কারণেও এমনটি হতে পারে, ফাউন্ডেশনের ধরণ, নির্মাণ নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক কারণগুলো যেমন পাইল বসানো।
হেলানো ভবন স্থিতিশীল করার পদ্ধতিগুলো বলতে গিয়ে প্রফেসর বলেন, আগে অনুসন্ধান করে দেখতে হবে কী কারণে ভবনটি হেলে পড়ছে। ভবনের চারপাশের ভূমিতে অনুসন্ধান চালানোর জন্য প্রচুর অর্থ খরচ করতে হবে। সবচেয়ে প্রচলিত সমাধানটি হচ্ছে হেলে পড়া ভবনের নিচে গ্রাউটিং করে একদিকের তুলনায় অন্যদিক উপরে তুলে ধরা। এটা খুবই সতর্কতার সঙ্গে বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে করতে হয়। অথবা ভবনের ভিত্তিতে কমিয়ে সেখানে জ্যাক ব্যবহার করে ভবনটি সোজা করতে হয়।
পিসার বিষয়টি ব্যতিক্রম উল্লেখ করে তিনি বলেন, পিসার ক্ষেত্রে আমাদের বিপরীত বিষয়টি করতে হয়েছে। সেখানের ভূমি অবিশ্বাস্য রকমের নরম হওয়ায় আমরা বরং কিছু মাটি সরিয়ে নিয়েছি। এটা তাড়াহুড়া করে কিছু করা সম্ভব নয়। সঠিকভাবে না করতে পারলে ভয়াবহ ভুল হতে পারে। সিএনএন।