৪ হাত এক হবে, যদি পাত্র হয়…

প্রকাশ: ২০১৭-০৪-২৪ ১৬:২৭:২৪


bdবিয়ের জন্য কন্যার বাবা সব সময় শিক্ষিত, বিত্তবান এবং ভালো পাত্র খোঁজ করেন। কিন্তু একটি ব্যতিক্রম পাত্রের বিজ্ঞাপন দিয়ে আলোচনায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের এক বাসিন্দা। দাবিদাওয়া তেমন কিছু নেই। একটাই আবদার, ছেলে যেন বামপন্থী হয়। অনেক খোঁজাখুজি করে যখন পাত্র মিলল না, তখন শ্রেণিবদ্ধ বিজ্ঞাপন দিয়ে বামপন্থী আদর্শ পাত্রের খোঁজে নামে পাত্রীর পরিবার। একটাই শর্ত, ছেলেকে বামপন্থী চাকুরিজীবী পাত্র হতে হবে।

একটু স্পষ্ট করেই বলা যাক! রবিবার সিপিএমের মুখপত্রে বিজ্ঞাপন দেন কলকাতার গল্ফগ্রিনের বাসিন্দা দীপ্তানুজ দাশগুপ্ত। বিজ্ঞাপনে খুব স্পষ্ট করে তিনি বলেছেন, “আমার বোনের জন্য বামপন্থী চাকুরিজীবী ৩০-৩২ বছর বয়সি পাত্র চাই। ” শ্রেণিবদ্ধ বিজ্ঞাপনে পাত্রীর জীবনপঞ্জিও উল্লেখ করা হয়েছে। এমনিতে পাত্র বা পাত্রীর গায়ের রং, উচ্চতা, বয়স, পেশার তথ্য দিয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়ার চল বহুদিনের। কিন্তু এক্ষেত্রে তো একেবারে ৩০-৩২ বছরের টগবগে ‘বামপন্থী’ পাত্রর দাবি! তাও আবার সিপিএমের এই বাজারে। যখন রাজ্যে ৩৪ বছর শাসন করা দলটার ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে, তখন ‘বামপন্থী’ পাত্রর খোঁজ কেন?

পাত্রীর ভাই দীপ্তানুজ দাশগুপ্তর ব্যাখ্যা, “ঘটি-বাঙালের লড়াই হয়। লড়াই হয় মোহনবাগান বনাম ইস্টবেঙ্গলের। কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে লড়াই হোক সেটা কখনও কাম্য নয়। আর চাই না রাজনীতিটা বাড়ির মধ্যে কোথাও ফাটল তৈরি করুক। আমরা বামপন্থী। তাই চাই, আমাদের পরিবারের যে সদস্য হবে, সেও যেন একই মতাদর্শের হয়। ”

দাশগুপ্ত বাড়ির প্রতিটি সদস্যই নাকি বাম আদর্শে অনুপ্রাণিত। সিপিএমের সমর্থক। এমনকী দীপ্তানুজবাবু নিজেও ছাত্র রাজনীতি করতেন। কাঁধে নিয়েছিলেন এসএফআই-ডিওয়াইএফআইয়ের পতাকা। তিনি জানান, বিজ্ঞাপন দেওয়ার আগে পাত্রীর সঙ্গে কথা বলে, তাঁর মতামত নিয়েই ছাপা হয়েছে। পাত্রীও বামপন্থী– এমনটাই জানিয়েছেন দীপ্তানুজ। কিন্তু এ বাজারেও যখন লাল পতাকা উড়তে দেখা যাচ্ছে না, তখন কী পাওয়া যাবে ‘বামপন্থী’ পাত্র। পাত্রীর ভাইয়ের দাবি, “অবশ্যই পাওয়া যাবে। কে বলেছে সিপিএম শেষ হয়ে গিয়েছে? এখনও প্রচুর মানুষ আছেন যাঁরা সিপিএমকে ভোট দেন। আর আজ বিজ্ঞাপনের পরেও কত ফোন এসেছে। ”

বিজ্ঞাপনটি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটেও বেশ আলোড়ন ফেলেছে। কত ধরনের মন্তব্য তাতে। কারও কটাক্ষ, চীনের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিলে এমন পাত্র পাওয়া যাবে। আবার কারও বক্তব্য, বাংলায় দূরবিন দিয়েও এমন পাত্র পাওয়া যাবে না। কেউ আবার সোশ্যাল সাইটে লিখেছেন, বন্ধু কংগ্রেসের ঘরে খোঁজ করুন! তবে বিজ্ঞাপনটা যে চমক দিয়েছে, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “পরিশীলিত মনের পরিচয় দিয়েছেন ওই বিজ্ঞাপনে। খুব সুন্দর বার্তা দেওয়া হয়েছে তাতে। এটা হওয়াই উচিত। ” একটা সময় ছিল কংগ্রেসের ঘরের মেযের বিয়ে হত কংগ্রেসের ঘরেই। এই বিজ্ঞাপনের সূত্রে সেই ঘরানা আবার মাথা চাড়া দেবে কিনা তেমন জল্পনাও শুরু হয়েছে। এবার কি তাহলে সিপিএমের ঘরেই সিপিএমের মেয়ের বিয়ে! চার হাত এক হবে, যদি সে বামপন্থী হয়!  সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন