নকশাবহির্ভূত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ হাইর্কোটের
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৯-০৭-০৪ ০৯:৫৯:৩৬
রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের পাশে অবস্থিত যেসব ভবনে কার পার্কিংয়ের জায়গায় নকশাবহির্ভূতভাবে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও দোকান তৈরি করা হয়েছে সেগুলো এক মাসের মধ্যে অপসারণ বা ভেঙে ফেলতে ভবন মালিকদের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ভবন মালিকরা নিজ উদ্যোগে অবৈধ স্থাপনা অপসারণ না করলে পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে তা অপসারণ করতে রাজউককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই অপসারণের খরচ ভবন মালিকের কাছ থেকে আদায় করতে বলা হয়েছে।
বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
রায়ে অবৈধ স্থাপনা অপসারণের বিষয়ে বাংলা ও ইংরেজি দৈনিকে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে রাজউককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অবৈধ স্থাপনা অপসারণের বিষয়ে রাজউকের সংশ্লিষ্ট অথরাইজড কর্মকর্তাকে নিজ নিজ এলাকায় মাইকিং করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া রাজধানীর সড়কগুলোর আশেপাশে যেসব জায়গায় কার পার্কিংয়ের জন্য সিটি করপোরেশন অনুমোদন দেয়নি সেসব স্থান থেকে গাড়ি অপসারণ ও আইনগত পদক্ষেপ নিতে সিটি করপোরেশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালতের এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে তিন মাস পর পর অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে সব বিবাদীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আসাদুজ্জামান সিদ্দিকের করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ রায় দিয়েছেন উচ্চ আদালত। রিট আবেদনকারী পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ইমাম হোসেন ও মো. শাহজাহান।
এর আগে ২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল জারি করেন। রুলে অনুমোদনহীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বা অবৈধ স্থাপনা অপসারণের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। পূর্তসচিব, ঢাকার দুই মেয়র, রাজউক চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। একই সঙ্গে কোন কোন ভবনে কার পার্কিংয়ের জায়গায় নকশাবহির্ভূত স্থাপনা রয়েছে তার তালিকা ৬০ দিনের মধ্যে হাইকোর্টে দাখিল করতে রাজউকের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এই নির্দেশের পর রাজউক গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকার কয়েক শ ভবনের তালিকা দাখিল করে। পরবর্তী সময়ে রাজউক প্রতিবেদন দিয়ে আদালতকে জানায়, ২০১৬ সাল থেকে তারা এসব অবৈধ স্থাপনা অপসারণে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে, যা অব্যাহত রয়েছে। এ অবস্থায় রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে গতকাল রায় দেওয়া হলো।
রায়ে আদালত তাঁর পর্যবেক্ষণও দিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, সড়কের পাশে নির্মিত ভবনের গাড়ি পার্কিংয়ের স্থানে অবৈধভাবে দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তৈরি করা হচ্ছে। ফলে এসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আসা গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য জায়গা না পেয়ে রাস্তার ওপর পার্কিং করে। এতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এই যানজট এখন চরম আকার ধারণ করেছে। ফলে রাস্তায় জনগণের চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে, জনগণ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। এ কারণেই ভবনের কার পার্কিংয়ের স্থানে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা দ্রুত অপসারণ করা প্রয়োজন।
রায়ে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব জনগণের অবাধ যাতায়াত নিশ্চিত করা। ভবন নির্মাণ আইন অনুযায়ী অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করার দায়িত্ব যথাযথ কর্তৃপক্ষের। কিন্তু তারা অবৈধ স্থাপনা অপসারণে পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তাদের অবহেলার কারণে ঢাকার গোটা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণেই সড়কের পাশের ভবনে কার পার্কিংয়ে থাকা সব অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করা প্রয়োজন।
রায়ে বলা হয়, রাজউককে গোটা ঢাকা শহরের এসব অবৈধ স্থাপনা থাকা ভবনের তালিকা দাখিল করতে বলা হলেও তারা শুধু গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকার তালিকা দাখিল করেছে। তার পরও এই তালিকায় গোটা শহরের চিত্র ফুটে উঠেছে।
রায়ে বলা হয়, এই রুলের ওপর শুনানিকালে রাজউক তথা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, তারা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তার পরও আদালতের নির্দেশনা পেলে তাদের কাজ অব্যাহত রাখতে সুবিধা হবে।
রায়ের পর অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই রায় কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করলে রাজধানীর সড়কের যানজট কমবে বলে আশা করি।’
প্রসঙ্গত, গত ২৮ মার্চ বনানীর একটি বহুতল ভবনের অগ্নিকাণ্ডের পর ঢাকার বহুতল ভবনগুলোর অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে জরিপ পরিচালনা করে রাজউক। সংস্থাটির আটটি অঞ্চলে পরিচালনা করা জরিপে এক হাজার ৮১৮টি বহুতল ভবনের (১০ তলার ওপরে) মধ্যে ৩০৯টি ভবনের পার্কিংয়ের জায়গা অন্য কাজে ব্যবহার করা হয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। পরবর্তী সময়ে এই ৩০৯টি ভবনের পার্কিংয়ের জায়গা খালি করতে প্রতিটি ভবনের মালিককে চিঠি দেয় রাজউক। এ ছাড়া এসব ভবনের মধ্যে ৫৬৬টি ভবনের কোনো অগ্নিনির্গমন সিঁড়ি পাওয়া যায়নি। পুরো ঢাকা শহরে বহুতল ভবনগুলোর মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি ভবনে অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা নেই বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স।