৬’শ ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে দুদক
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৯-১০-৩১ ১৫:১২:১৩
প্রভাবশালী ২৩ ব্যক্তি ও তাদের প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬শ’ ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে দুদক। হিসাবগুলো আলোচিত ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই, যুবলীগের সম্রাট, জি কে শামীম, খালেদসহ অন্যান্য ব্যক্তি ও তাদের প্রতিষ্ঠানের।
বিভিন্ন ব্যাংকে এদের আমানতের স্থিতির পরিমাণ ১ হাজার ২৭ কোটি টাকা। বর্তমানে অ্যাকাউন্টগুলোর লেনদেন স্থগিত ও কিছু জব্দ করা হয়েছে। তাদের সম্পদের খোঁজ করতেই বেরিয়ে এসেছে এ তথ্য।
এ সংক্রান্ত সব তথ্য চেয়ে বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের মহাব্যবস্থাপকের কাছে চিঠি দেয়া হয়। দুদক মহাপরিচালক সাঈদ মাহবুব খানের সই করা চিঠিটি বাংলাদেশ ব্যাংকে পৌঁছেছে।
আরও শতাধিক ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবের লেনদেনের তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে আলাদাভাবে চিঠি দিতে যাচ্ছে দুদক ।
এদিকে, বুধবার গণপূর্ত বিভাগের ১২ জনের বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইমিগ্রেশনের এসপি বরাবর চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
এছাড়া, কৃষক লীগের শফিকুল আলম ফিরোজের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদের মামলা করেছে দুদক। বুধবার সংস্থাটির সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকে দেয়া চিঠিত বলা হয়েছে, চলমান অভিযানের অংশ হিসেবে দুদক বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি, ঘুষ, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয় অনুসন্ধান করছে।
এ অভিযান শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ (ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট) চার শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে।
দুদকের অনুসন্ধান ও মামলার কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য জব্দ করা হিসাবগুলোর পূর্ণ বিবরণীসহ প্রকৃত অর্থ লেনদেনসংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনা প্রয়োজন।
ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক হিসাবের রেকর্ডপত্র দিয়ে তদন্ত কাজে সহায়তার জন্য অনুরোধ করা হল। চার শতাধিক নামের মধ্যে প্রভাবশালী ২৩ ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবও আছে।
এদিকে, দু’দফা বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো ৭১ জনের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে যে চিঠি দেয়া হয়েছিল তার ভিত্তিতে অনেকের বিষয়ে তথ্য পাঠানো হয়েছে। তবে তা পরিপূর্ণ না হওয়ায় দুদক থেকে ফের চিঠি দেয়া হচ্ছে।
সংস্থাটির উপ-পরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য জানান, দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্তের প্রয়োজনে এসব তথ্য চাওয়া হয়েছে। আমরা আশা করব বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের তদন্ত কাজে সহায়তা করবে।
বুধবার দুদকের মহাপরিচালকের চিঠির সঙ্গে যে তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে তার প্রথম ধাপে আছেন- বিতর্কিত ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই, যুবলীগের ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, জি কে শামীম, অনলাইন ক্যাসিনো সম্রাট সেলিম প্রধান, যুবলীগের কাজী আনিসুর রহমান আনিসসহ ২৩ জন।
এছাড়া অন্যরা হলেন- ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জকামান রাজিব, হাবিবুর রহমান মিজান, মোমিনুল হক সাঈদ, যুবলীগের এনামুল হক আরমান, সেলিম প্রধানের সহযোগী শাহনাজ পারভীন, আক্তারুজ্জামান, আলম গাজী, জাকির হোসেন পলাশ, মুমিতুর রহমান, আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ভাগ্নে শাহেদুল হক, গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক ভূঁইয়া ও তার ভাই রুপন ভূঁইয়া, কৃষক লীগের শফিকুল আলম ফিরোজ, মোহামেডান ক্লাবের পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, জি কে শামীমের স্ত্রী আয়েশা আক্তার, তার আত্মীয় শামীমা সুলতানা, ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক সভাপতি এসএম রবিউল ইসলাম সোহেল।
এদের হিসাবে আমানতের স্থিতির পরিমাণ ১ হাজার ২৭ কোটি টাকা। যার মধ্যে জি কে শামীমের ১৯ ব্যাংকের ১৩২ হিসাবে ৪৫৯ কোটি টাকা। তার ঋণ স্থিতির পরিমাণ ১৪৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
তালিকায় দেখা যায়, কৃষক লীগের শফিকুল আলম ফিরোজের ৯ ব্যাংকের ১৬টি হিসাবে আমানত স্থিতি আছে ৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার নামে ৮ ব্যাংকের ৭১ হিসাবে ২৭ কোটি ৭ লাখ টাকা, এনামুল হক এনু ও রুপনের নামে ১৬ ব্যাংকের ৫০ হিসাবে ১৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, কাজী আনিসুর রহমানের নামে ৮ ব্যাংকের ৩৩ হিসাবে ৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা, মুমিতুর রহমানের নামে ৮ ব্যাংকের ৩৩ হিসাবে ৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
এছাড়া মোমিনুল হক সাঈদের নামে ৪ ব্যাংকের ৭ হিসাবে ৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা, লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার নামে ১০ ব্যাংকের ৪০ হিসাবে ২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ও ১ হাজার ৬৫৯ দশমিক ৪৮ মার্কিন ডলার, সেলিম প্রধান ও তার সহযোগীদের নামে ২০ ব্যাংকের ৭৫ হিসাবে ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ও ১০০৮ দশমিক ৮০ মার্কিন ডলার।
সম্রাটের নামে ব্যাংকের ১৪ হিসাবে ১ কোটি ১১ লাখ টাকা, হাবিবুর রহমান মিজানের নামে ৭ ব্যাংকের ৪২ হিসাবে ১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, এনামুল হক আরমানের নামে ৫ ব্যাংকের ৩১ হিসাবে ৪ কোটি টাকা, তারেকুজ্জমান রাজীবের নামে ৫ ব্যাংকের ৩১ হিসাবে ১ কোটি ৮ লাখ টাকা আমানত স্থিতি রয়েছে।
জানা গেছে, তালিকায় নাম থাকা বরিশাল-৪ আসনের এমপি ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ, ভোলার এমপি নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন ও তার স্ত্রী ফারজানা চৌধুরী, চট্টগ্রামের এমপি ও চট্টগ্রাম আবাহনী ক্লাবের মহাসচিব শামসুল হক চৌধুরী, সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সাতক্ষীরার সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার মজিবুর রহমান, সাবেক এমপি শামসুল হক ভূঁইয়া, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদ্য বিদায়ী সভাপতি মোল্লা আবু কাওসার, তার স্ত্রী পারভিন সুলতানা, ঢাকা যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহ-সভাপতি নেতা গাজী সারোয়ার বাবু, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, এফ রহমান হলের ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান, জি কে শামীমের ক্যাশিয়ার জিয়া, সোহেল ও নাঈম, যুবলীগ দক্ষিণের সহ-সভাপতি যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হোসেন স্বপন, সরোয়ার হোসেন মনা, নির্বাহী সদস্য জাকির হোসেন, শেখ মারুফ, ৪১নং ওয়ার্ডের সহ-সভাপতি তাবিবুল হক তামিম, ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের আবুল কালাম, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের আবুল কালাম আজাদ, ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি রাশেদুল হক ভূঁইয়া, ৪১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক বাতেনুল হক ভূঁইয়া, হারুনুর রশিদ, পদ্মা অ্যাসোসিয়েটস নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার মিনারুল চাকলাদার, ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার রেজোয়ান মোস্তাফিজ, মেসার্স জামাল অ্যান্ড কোংয়ের জামাল হোসেন, বনানী গোল্ড ক্লাবের আবদুল আউয়াল, ব্যবসায়ী আবুল কাশেম, গণপূর্ত অধিদফতরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান মুন্সী, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুল হাই, শিক্ষা অধিদফতরের ঠিকাদার শফিকুল ইসলাম, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাজ্জাদ, মুমিতুর রহমান, গণপূর্ত অধিদফতরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন, নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল কাদের, আফসার উদ্দিন, ইলিয়াস আহমেদ, স্বপন চাকমা, প্রধান প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে, নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুল হক মধু, শওকত উল্লাহ, গণপূর্ত সার্কেল-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুল হক, ইসলামী ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক শামী আফজাল, সাবেক সচিব প্রশান্ত কুমার রায়সহ আরও শতাধিক ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের তথ্য চেয়ে পৃথকভাবে চিঠি দিচ্ছে দুদক। এদিকে, বুধবার দুদক থেকে গণপূর্ত বিভাগের ১২ জনের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) ইমিগ্রেশন এসপি বরাবর চিঠি পাঠিয়েছে দুদক।
দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন ওই চিঠিতে সই করেন। যাদের বিদেশ গমনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে তারা হলেন- গণপূর্ত অধিদফতরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন, নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল কাদের চৌধুরী, নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুল হক, মোহাম্মদ শওকত উল্লাহ, আফসার উদ্দিন, ইলিয়াস আহমেদ, স্বপন চাকমা, প্রধান প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন, আবদুল মোমেন চৌধুরী, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাজ্জাদুল ইসলাম, মুমিতুর রহমান।
এদিকে, কৃষক লীগের শফিকুল আলম ফিরোজের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদের মামলা করেছে দুদক। বুধবার দুদকের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস