মোবাইল এ্যাপ চালু করবে সোনালী ব্যাংক

সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০২০-০৩-০৫ ১৭:১৮:১৭


আগামী ১৭ মার্চ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক হিসেবে প্রথম মোবাইল এ্যাপ চালু করবে সোনালী ব্যাংক। ইতোমধ্যে এজেন্ট ব্যাংকিং অনুমোদন নিয়েছে ব্যাংকটি। প্রান্তিক পর্যায়ে সেবা পৌঁছে দিতে শীঘ্রই কাজ শুরু করবে। এ সেবার মাধ্যমে রেমিটেন্স দ্রুত গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেয়া যাবে। পাশাপাশি মুজিববর্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের ১ লাখ টাকা করে সম্মাননা দেয়াসহ বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে সরকারী এ ব্যাংকটি। বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের বার্ষিক সম্মেলন-২০২০ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ আসাদুল ইসলাম, সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী প্রমুখ। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী (সিইও) এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আতাউর রহমান প্রধান।

অর্থমন্ত্রী বলেন, মুজিববর্ষে আর্থিকভাবে যেন আমরা পিছিয়ে না যাই, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এখন বিশ্বব্যাপী একটি ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এর মধ্যে দিয়েও ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা উন্নত দেশের কাতারে যেতে চাই। তাই সচেতনতার সঙ্গে আপনাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, সোনালী ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। খেলাপী ঋণ কমে এসেছে, মূলধন স্বল্পতাও কমে এসেছে। অন্যান্য সূচকেও আশাব্যঞ্জক সাফল্য অর্জন করেছি। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে শিল্প খাতে ঋণ দেয়ার তাগিদ দেয়া হচ্ছে। ২০২৪ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশে যেতে হলে ম্যানুফাকচারিং খাতে ঋণ সরবরাহের গতি বাড়াতে হবে।

গবর্নর ফজলে কবির বলেন, হলমার্কের ঘটনার পর সোনালী ব্যাংকসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদের ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে অনেক সংকোচ ও ভীতি রয়েছে। এটি একেবারে থাকা উচিত নয়। এ ভয় দূর করে ঋণ দেয়ার পরামর্শ দিয়ে গবর্নর বলেন, আপনারা (কর্মকর্তারা) যদি সব ধরনের নিয়ম পরিপালন করে ঋণ প্রদান করে থাকেন, তাহলে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। বিতরণকৃত ঋণ কখনও সন্দেহজনক, কখনও মন্দ মানের হবেই। তাই বলে ঋণ দেয়ার বন্ধ করবেন নাকি? তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে ঋণ দিতে হবে। আর ভয়ভীতি কাটিয়ে সব ধরনের নিয়ম মেনে ঋণ প্রদান করবেন, তাহলে কোন সমস্যা হবে না। আর ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে আপনারা যেন কোন সমস্যায় না পড়েন, এ জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক সবসময় আপনাদের পাশে থাকবে। একইসঙ্গে নতুনভাবে বিতরণ করা ঋণ যেন ভবিষ্যতে বোঝা হয়ে না দাঁড়ায় এ বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন গবর্নর। ঋণখেলাপী হলে শুরুতেই মামলায় না যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে গবর্নর বলেন, প্রতিষ্ঠান কোন সমস্যায় পড়লে তাকে যতটুকু প্রয়োজন সহায়তা করে কর্মযজ্ঞে ফিরে যাওয়ার সহযোগিতা করতে হবে। কারণ মামলা করলে প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়; কর্মসংস্থানে বাধা সৃষ্টি হয়।

তিনি বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; এ ক্ষেত্রে ব্যাংকিং খাত সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্যাংকিং খাতের মধ্যে সোনালী ব্যাংকের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। সুতরাং এই ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব অনেক। বর্তমানে দেশের মোট খেলাপী ঋণের পরিমাণ ৯৪ হাজার কোটি টাকা। যা মোট বিতরণের ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। একটি দেশের অর্থনীতির জন্য এটি অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে সেপ্টেম্বর শেষে এটা অনেক বেশি ছিল। খেলাপী কমিয়ে আনতে ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ১০ বছর মেয়াদী রিশিডিউল পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ব্যাক টু ব্যাক লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে ব্যাংকারদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে গবর্নর বলেন, এটা যেন পরবর্তীতে ফোর্স লোনে পরিণত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ ব্যাংকের জন্য এটি একটি বোঝা।

সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী বলেন, আগামী ১৭ মার্চ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক হিসেবে প্রথম মোবাইল এ্যাপ চালু করবে। তিনি বলেন, আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং অনুমোদন নেয়া আছে। প্রান্তিক পর্যায়ে সেবা পৌঁছে দিতে শীঘ্রই কাজ শুরু করবে। এ সেবার মাধ্যমে রেমিটেন্স দ্রুত গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেয়া যাবে। পাশাপাশি মুজিববর্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের এক লাখ টাকা করে সম্মাননা দেয়াসহ বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান বলেন, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও আইএমএফের (বিশ্ব মুদ্রা তহবিল) পূর্বাভাস এ বছর বিশ্ব প্রবৃদ্ধি কমবে। করোনাভাইরাসের কারণে আমদানি-রফতানি কমে যাবে। এতে করে আয় কমে যাবে। তাই এখন আমাদের প্রোডাক্টিভিটি বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, ১ এপ্রিল সব ব্যাংকে ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশ করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের সুদহার এখনই ৯ শতাংশে আছে। তাই আমাদের গ্রাহক আকৃষ্ট করতে সেবার মান বাড়াতে হবে। পাশাপাশি কেলেঙ্কারি রোধে বেসরকারী খাতের ঋণ সেন্ট্রালাইজড করা হবে বলে তিনি জানান।

সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান বলেন, সোনালী ব্যাংকের এ বছরের স্লোগান ‘দীপ্ত শপথ মুজিববর্ষে, আমরা যাবো সবার শীর্ষে’। এই স্লোগানকে সামনে রেখে ব্যাংকিং খাতে আমরা শীর্ষে যেতে চাই। মুখে নয়, কাজে বাস্তবায়ন করে আগামী বছরে সোনালী ব্যাংক খেলাপী ঋণের পরিমাণ এক অংকে নামিয়ে আনতে সক্ষম হবে। ২০১৯ সালে সরকারী ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুনাফা করেছে সোনালী ব্যাংক। কিন্তু ৫২টি সেবার মধ্যে ৩৭টি সেবা বিনামূল্যে দেয়ার কারণে প্রায় ৫০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা মুনাফা কম হয় বলেও জানান তিনি। ‘এসব সেবার মান আরও উন্নত করেই সামনের দিকে এগিয়ে যাব’ বলে উল্লেখ করেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।