বাংলাদেশকে ৫১৭৭ কোটি টাকা সহায়তা দিচ্ছে এডিবি
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৪-২১ ০৯:০৫:১৮
চলমান মহামারি করোনায় আর্থিক সংকট কাটাতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) জনস্বাস্থ্য খাতের জন্য গঠিত নতুন প্যাকেজ থেকে ৫ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশকে। এর ফলে করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা আরও বাড়বে বলে মনে করছে সংস্থাটি। এছাড়া এডিবির কাছে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের পাশাপাশি আরও অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়েছেন বাংলাদেশের জন্য।
সোমবার ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতি ও সহযোগিতা প্রসঙ্গে এডিবির প্রেসিডেন্ট মাসাতাসুগু আসাকাওয়ার সঙ্গে এক ভিডিও কলে আলাপচারিতা শেষে এসব তথ্য জানান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি জানান, স্বাস্থ্য খাতের জরুরী সেবা ও বাজেট সাপোর্টের জন্য বাংলাদেশকে ৬০.২ কোটি ডলার আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এডিবি। এজন্য এডিবিকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্ব সম্প্রদায় এখন একটি ক্রান্তিকাল পার করছে। নোভেল করোনাভাইরাসের কারণে আজ মানব জাতির জীবন ও অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন। গোটা বিশ্ব প্রকট অর্থনৈতিক মন্দার মুখে। এ মন্দার ধাক্কা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্যও দুঃশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা জানি না যে, এই সঙ্কট কতদিন থাকবে এবং তা আমাদের অর্থনীতিকে কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তবুও সম্ভাব্য অর্থনৈতিক নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। করোনাভাইরাসের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় এডিবির ভূমিকার প্রশংসা করেন অর্থমন্ত্রী। এডিবির প্রেসিডেন্টের গতিশীল নেতৃত্বে উন্নয়নশীল দেশগুলো করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। অর্থমন্ত্রী বলেন, করোনার প্রভাবে আমাদের আমদানি-রফতানির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে বেশিরভাগ দেশে প্রবাসী ভাই-বোনেরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। স্থবিরতা নেমে এসেছে রেমিটেন্স প্রবাহে। এই সঙ্কটময় পরিস্থিতির মুখোমুখী হওয়ার জন্য আমরা অবশ্যই এডিবিকে অবিরাম সমর্থন ও সহায়তার জন্য অনুরোধ করছি। এই ক্রান্তিকালীন সময়ে এডিবির তাৎক্ষণিক সহায়তাটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত জরুরী ছিল। যদিও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমাদের প্রয়োজন এর চেয়ে আরও অনেক বেশি।
বাংলাদেশের ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় এডিবির বৃহত্তর অংশগ্রহণ নিশ্চিতে তিনি বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজের ওপর করোনার বিরূপ প্রভাব মোকাবেলার জন্য এডিবি থেকে বর্ধিত প্রকল্প সহায়তা এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরের ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অতিরিক্ত ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জন্য আরও ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেট সাপোর্ট, কোভিড-১৯ মোকাবেলায় ফ্রন্টলাইন কর্মীদের (চিকিৎসা কর্মী, সিভিল প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, অত্যাবশ্যকীয় সেবা প্রদানকারী) জন্য ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, কোভিড-১৯’র কারণে চাকরি হারানো দেশী ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য এবং অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্প খাতের ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনে ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আর্থিক সহায়তা এবং অছাড়কৃত ওসিআর লোনের চার্জ হ্রাসের অনুরোধ করেন। এডিবি প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের উল্লেখিত খাতসমূহে আর্থিক সহায়তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছেন এবং বিষয়টি পর্যালোচনা করে বাংলাদেশকে সময় মতো অবহিত করবেন বলে জানান।
ভিডিও কলে অর্থমন্ত্রী ও এডিবি প্রেসিডেন্টের মধ্যে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপ নিয়েও আলোচনা হয়। এ সময় অর্থমন্ত্রী বলেন, কোথাও লকডাউন, কোথাও গণছুটি আবার কোথাও কার্ফু জারি করে মানুষকে ঘরবন্দী করা হয়েছে। বাংলাদেশে গত ২৫ মার্চ থেকে আগামী ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। জরুরী সেবা কার্যক্রম ছাড়া সবকিছু বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এখন দেশের সিংহভাগ শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ছোটখাটো কারখানা বন্ধ। গণপরিবহন ও বিমান চলাচল স্থগিত। ইতিপূর্বে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর উদ্বোধন অনুষ্ঠান, স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান ও পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের অর্থনৈতিক পদক্ষেপের প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষ ও অর্থনীতির জন্য ৯৫ হাজার ৬১৯ কোটি টাকার বিভিন্ন আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, যা জিডিপির ৩.৩ শতাংশ।