বর্তমান সেনাবাহিনী চৌকস

---

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রশংসা করে বলেছেন, আধুনিক প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জামাদির সমন্বয়ে আজকের সেনাবাহিনী অনেক বেশি উন্নত, দক্ষ এবং চৌকস। বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কৌশল এবং প্রযুক্তিগত দিক থেকে এক দশক আগের সেনাবাহিনীর চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা।

বুধবার চট্টগ্রামের ভাটিয়ারীস্থ বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে ৭৫তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের কমিশনপ্রাপ্তি উপলক্ষে আয়োজিত রাষ্ট্রপতি প্যারেডে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

মূল অনুষ্ঠান শুরুর আগে, প্রধানমন্ত্রী একটি খোলা জিপে করে সুসজ্জিত প্যারেড পরিদর্শন করেন এবং সালাম গ্রহণ করেন। বিশেষ কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য পাসিং আউট ক্যাডেটদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মুহম্মদ শফিউল হক এবং বিএমএ কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল সাইফুল আলম এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যরা, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টারা, জাতীয় সংসদের সদস্যরা, নৌবাহিনী প্রধান, সরকারের পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা, কূটনৈতিকরা, আমন্ত্রিত অতিথিরা এবং কমিশনপ্রাপ্ত ক্যাডেটদের অভিভাবকরাও উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছলে তাকে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মুহম্মদ শফিউল হক, ২৪ ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের জিওসি এবং চট্টগ্রামের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার, জেনারেল অফিসার কমান্ডিং অব আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড লে. জেনারেল আব্দুল আজিজ এবং বিএমএ কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল সাইফুল আলম প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।

সেনাবাহিনী আধুনিকায়নে তার সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদের আমরা নতুন নতুন ব্রিগেড, ইউনিট ও ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠাসহ এনডিসি, বিপসট, এএফএমসি, এমআইএসটি এবং এনসিওস একাডেমির মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানসমূহ প্রতিষ্ঠা করি। সেনাবাহিনীর অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পর্যাপ্ত সংখ্যক এপিসি, এআরভি, ব্যাটেল ট্যাংক, আরর্মড রিকভারি ভেহিকেল, হেলিকপ্টার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সমরাস্ত্র এবং সরঞ্জামাদি ক্রয় করা হয়।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের সেনাবাহিনীর জন্ম। স্বাধীন দেশের উপযোগী একটি শক্তিশালী এবং প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী গড়ে তোলার জন্য জাতির পিতা ১৯৭৪ সালে প্রতিরক্ষা নীতি প্রণয়ন করেন। বিভিন্ন সেনানিবাসের অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি বিশ্বমানের মিলিটারি একাডেমি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন তিনি। ১৯৭৪ সালে কুমিল্লা সেনানিবাসে তিনি বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির উদ্বোধন করেন।

১৯৭৫ সালের ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির প্রথম ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী অনুষ্ঠানে জাতির পিতা উপস্থিত ছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তার সে’দিনের ভাষণের অংশ বিশেষ উদ্ধৃত করেন।

প্রধামন্ত্রী বলেন, এখানে ইতোমধ্যে ক্যাডেটদের ইনডোর প্রশিক্ষণের সব অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে এ একাডেমিতে বিভিন্ন বিষয়ে ৪-বছর মেয়াদি অনার্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি চালু করা হয়েছে। একইসঙ্গে ক্যাডেটদের কমিশন লাভের সময়কাল ২ বছর থেকে ৩ বছরে উন্নীত করা হয়েছে। এই প্রথমবারের মতো ক্যাডেটরা একেবারে লেফটেন্যান্ট পদে কমিশন লাভ করতে যাচ্ছে। একটি প্রশিক্ষিত ও আধুনিক সেনাবাহিনী গঠনে এ উদ্যোগ যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করবে বলে আমি আশা রাখি।

নতুন ক্যাডেটদের কমিশন লাভের প্রাক্কালে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছাও জানান প্রধানমন্ত্রী। দিনের কুচকাওয়াজের মধ্য দিয়ে ৩৫০ জন ক্যাডেট কমিশন লাভ করেন। যার মধ্যে ৩৪৩ জন বাংলাদেশি, ৫ জন ফিলিস্তিনি এবং ২ জন শীলঙ্কার নাগরিক রয়েছেন।

ব্যাটালিয়ন সিনিয়র আন্ডার অফিসার সাদমানুর রহমান ৭৫তম বিএমএ লং কোর্সে বেস্ট অলরাউন্ড নৈপুণ্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ‘সোর্ড অব অনার’ লাভ করেন। তিনি একই মিলিটারি বিষয়ে সর্বোচ্চ মান অর্জন করায় ‘আর্মি চিব গোল্ড মেডেল’ ও লাভ করেন।