বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে রাশিয়াকে অনুরোধ

---

জাহাজ নির্মাণ শিল্পে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি নিয়োগের জন্য রাশিয়াকে অনুরোধ করেছেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসান। রাশিয়ার প্রিমর্স্কি অঞ্চলের গভর্নর ওলেগ কোঝেমিয়াকোর সঙ্গে বৈঠকে এ অনুরোধ জানান রাষ্ট্রদূত।

বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) মস্কোর বাংলাদেশ দূতাবাস জানায়, রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসান গত ১৫ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শহর ভ্লাদিভস্তক সফর করেন। সফরকালে ১৭ সেপ্টেম্বর তিনি প্রিমর্স্কি অঞ্চলের গভর্নর ওলেগ কোঝেমিয়াকোর সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় রাষ্ট্রদূত রাশিয়াকে বাংলাদেশ থেকে জাহাজ নির্মাণ শিল্পে দক্ষ জনশক্তি নেওয়ার জন্য গভর্নরকে অনুরোধ করেন। রাষ্ট্রদূত গভর্নরকে জানান, জাহাজ নির্মাণ শিল্পে বাংলাদেশি শ্রমিকদের দক্ষতা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।

কামরুল আহসান বলেন, সিঙ্গাপুরের শুধু জাহাজ নির্মাণ শিল্পেই বর্তমানে ৬০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে কাজ করছে। বাংলাদেশ বিগত কয়েক বছরে জাহাজ নির্মাণ শিল্পে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ইউরোপ ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ ফেরি বোট, ফিডার ভ্যাসল ও কোস্টাল শিপ রফতানি করছে।

রাষ্ট্রদূত প্রিমর্স্কি অঞ্চলের শিল্প উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানান। গভর্নর ওলেগ কোঝেমিয়াকো জাহাজ নির্মাণ শিল্পে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে রাষ্ট্রদূতকে আশ্বস্ত করেন এবং এ সংক্রান্ত একটি কাঠামোবদ্ধ প্রক্রিয়া তৈরির জন্য আলোচনার প্রস্তাব রাখেন। এ বিষয়ে ভ্লাদিভস্তকে নিযুক্ত বাংলাদেশের অনারারী কনসাল আলেক্সান্দর জুভকোকে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালনের জন্য গভর্নরের পক্ষ থেকে অনুরোধ করেন রাষ্ট্রদূত।

প্রায় দেড় ঘণ্টার বৈঠকে দু’দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন রাষ্ট্রদূত ও গভর্নর। রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত দেড় দশকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশে যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সংঘটিত হয়েছে সে সম্পর্কে গভর্নরকে অবহিত করেন। তিনি রাশিয়ার সহযোগিতায় বাংলাদেশে নির্মাণাধীন রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে ভবিষ্যতে দু’দেশের মধ্যেকার চলমান অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও বৃদ্ধিকল্পে নতুন নতুন বিভিন্ন সহযোগিতার ক্ষেত্র উন্মোচনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

রাষ্ট্রদূত বিদেশে কর্মরত ১৩ মিলিয়ন বাংলাদেশি জনশক্তির কথা উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশিরা সব ধরনের পরিবেশে সব ধরনের কাজে নিয়োজিত আছেন। তিনি গভর্নরকে আশ্বস্ত করেন যে রাশিয়া বাংলাদেশিদের জন্য শ্রম বাজার উন্মুক্ত করলে বাংলাদেশ এ দেশে সব ধরনের দক্ষ জনশক্তি সরবরাহ করতে পারবে।

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রিমর্স্কি অঞ্চলের ফার্স্ট ভাইস-গভর্নর, বাণিজ্য বিষয়ক মন্ত্রী; শ্রম ও কারিগরী শিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রী; আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক প্রতিষ্ঠানের প্রধান; রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভ্লাদিভস্তক প্রতিনিধি; ভ্লাদিভস্তকে নিযুক্ত বাংলাদেশের অনারারী কনসাল এবং মস্কোয় বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম ও কল্যাণ উইংয়ের প্রথম সচিব।

মস্কোর বাংলাদেশ দূতাবাস আরও জানায়, সফরকালে রাষ্ট্রদূত স্থানীয় চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট বরিস স্তুপনিতস্কির সঙ্গেও বৈঠক করেন। বৈঠকে চট্টগ্রাম ও ভ্লাদিভস্তক চেম্বারের মধ্যে সম্প্রতি সাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের বিভিন্ন বিষয় বাস্তবায়নে কার্যকর ও বিস্তারিত আলোচনা হয়।

এছাড়াও তিনি ভ্লাদিভস্তক এর সর্ববৃহৎ জাহাজ নির্মাণ কোম্পানি জভেজদা শিপবিল্ডিং কমপ্লেক্স এবং ফার ইস্টার্ন ফেডারেল ইউনিভার্সিটি অব ভ্লাদিভস্তক পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনের সময় এসব প্রতিষ্ঠানের উচ্চ-পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।

এএ